জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
শ্রীলঙ্কার সরকারের অপব্যয়ের নজির হিসেবে দেশটিতে ছড়িয়ে আছে চীনের ঋণে তৈরি কিছু বিশাল প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই ক্ষমতাধর রাজাপক্ষে পরিবারের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হাম্বানটোটা জেলায়। কয়েকবছরের বাজেট ঘাটতি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতার কারণে শ্রীলঙ্কাকে বড় অংকের ঋণ নিতে হয়েছিল।
অন্যদিকে অবিবেচনাপ্রসূত বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে ঢাকা ঢেলেছে সরকার।
এতে সরকারের কোষাগারে দেখা দেয় বিরাট ঘাটতি। এর জেরে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘনিয়ে আসে তারই ধারাবাহিকতায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগের অনুমোদনদাতা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে।
চীনের সহায়তায় তৈরি প্রকল্পগুলো
সব প্রকল্পের মধ্যমণি হিসেবে হাম্বানটোটায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল গভীর এক সমুদ্রবন্দর। প্রত্যাশা ছিল দেশে শিল্পের প্রসারে ভূমিকা রাখবে এটি। কিন্তু বন্দরটি কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে শুধু ক্ষতির শিকারই হয়েছে। হাম্বানটোটার এক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রকল্পের ঘোষণা আসার পর আমরা অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম যে, এই এলাকা আরো উন্নত হবে। কিন্তু তা হয়নি। বন্দরটি আমাদের নয়। আমাদের বেঁচে থাকতেই লড়তে হচ্ছে। ’
একশ’ ৪০ কোটি ডলারের চীনা ঋণ পরিশোধ করতে পারছিল না হাম্বানটোটা বন্দর। ছয় বছরে হারিয়েছিল ৩০ কোটি ডলার। পরে ২০১৭ সালে চীনের এক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিয়ে দেওয়া হয় বন্দরটিকে।
একইভাবে দেড় ডলারের বেশি চীনা ঋণে তৈরি করা হয়েছিল এক সম্মেলন কেন্দ্র। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে একরকম অব্যবহৃতই পড়ে রয়েছে তা। কাছেই রয়েছে ২০ কোটি ডলার চীনা ঋণে নির্মিত রাজাপক্ষে বিমানবন্দর। কিন্তু কম ব্যবহারের কারণে একপর্যায়ে নিজস্ব বিদ্যুৎ বিল পর্যন্ত দিতে পারেনি এটি।
রাজধানী কলম্বোতেও চীনা তহবিলে গড়ে তোলা হচ্ছিল ৬৬৫ একরের এক কৃত্রিম দ্বীপ। কথা ছিল, আর্থিক কেন্দ্র খ্যাত দুবাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে তা। কিন্তু সমালোচকরা এরই মধ্যে ওই প্রকল্পকে ‘লুকোনো ঋণের ফাঁদ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতা
শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতা চীন। দেশটির মোট পাঁচ হাজার একশ’ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের অন্তত ১০ শতাংশ রয়েছে চীনের। গত মাসে চীনের রাষ্ট্রদূত কি ঝেনহঙ বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা যাতে ঋণখেলাপি না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ সহায়তা করেছে চীন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাঁরা আইএমএফ-এর কাছে গিয়েছে এবং ঋণখেলাপি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ’
অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাভোকাটা ইন্সটিটিউট -এর চেয়ারম্যান মুর্তুজা জাফেরজি বলেছেন, ‘কয়েক দশকের আর্থিক অপব্যয়িতা ও দুর্বল শাসন... আমাদেরকে সমস্যার মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। ’ এ সংকট আরো প্রবল হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারির জন্য পর্যটন ও রেমিট্যান্সের আয় কমে যাওয়ার কারণে। আমদানি নির্ভর দেশটি এখন বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্যও কিনতে পারছে না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন