রোকসানা আক্তার ||সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান) ||
ছোটবেলা থেকেই আমাদের সন্তানকে বারবার মনে করিয়ে দেয়া হয়---'তোমাকে ওর মতো হতেই হবে'।'ওর মতো না হতে পারলে সমাজে আমরা মুখ দেখাতে পারবো না, আমাদের মুখ উজ্জ্বল হবে না'।
'পাড়া-প্রতিবেশি, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে তোমাকেই হতে হবে সবচেয়ে সেরা!'ছেলেমেয়েরা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক শুরু করে দৌড়। সেরা হওয়ার দৌড়,
ক্যারিয়ারের জন্য দৌড়, স্ট্যাটাসের জন্য দৌড়, এর মতো হওয়ার জন্য দৌড়, ওর মতো হওয়ার জন্য দৌড়,এককথায় বাপ মায়ের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য দৌড়।
এই দৌড় আর শেষ হয় না।দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় সে যন্ত্র মানব হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
একসময় বাবা মায়ের বয়স হয়। তখন মা-বাবা চান সন্তানরা থামুক, একটু পাশে বসুক, একটু ভালোবাসুক। কিন্তু ততদিনে দৌড়াতে দৌড়াতে অভ্যস্ত সন্তান ইচ্ছা করলেই আর থামতে পারে না!!
শিখে যায় আরো জোরে দৌড়াতে! ক্যারিয়ার,টাকা, স্ট্যাটাস!সন্তানের তখন আর আবেগের চিন্তা থাকে না, থাকে শুধু প্রোমোশনের চিন্তা।! কেন দোষ দিব আমরা তাদের??
তাদেরকে কি আমার ভালবাসা শিখাচ্ছি?? ছোটবেলা থেকে শুধু পাঠ্যপুস্তক আর ক্যারিয়ারের পেছনেই দৌড়াতে শিখাচ্ছি!
সময় নষ্ট হবে বলে তাকে বন্ধুদের সাথে মিশতে দিচ্ছিনা! গল্পের বই,খেলার মাঠ, টিভি দেখা সবই হারাম করে দিয়েছি!! তাদের বৃষ্টি দেখা, আকাশ দেখা, নদীর বয়ে চলা,সাধারণ দৈনন্দিন কাজকর্মের সাথে একেবারেই অপরিচিত করে রেখে দিচ্ছি! এভাবেই এক আবেগহীন মানুষ হিসেবে আমরা মা-বাবাই তৈরি করে দিচ্ছি সন্তানকে।তাদের ইচ্ছে সবসময়ই ভুল বলে শিখিয়ে নিচ্ছি!
নিজের অজান্তে আবেগহীন মানুষ তৈরি করা মা-বাবা শেষ বয়সে প্রচণ্ড অবহেলার শিকার হয়ে যান।।এতে শুধু সন্তানের দোষ দেওয়া যাবে না।
আমাদের নিজেদের ভুল স্বীকার করতেই হবে।
বাবা-মা যখন বুঝতে পারেন বিরাট ক্যারিয়ারিস্ট সন্তানের গর্ব করার চেয়ে সন্তানের পাশে বসা,তাকে ছুঁয়ে দেখা, সাথে বসে এক কাপ চা খাওয়াটা বেশি সুখের---তখন আর কিছু করার থাকে না!
একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের - এই পৃথিবীর সকল মানুষেরই মস্তিষ্ক আছে। কোনো না কোনো ভাবে সে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।এর জন্য তার শৈশব বিষময় করে দিব না আমরা।
তাই ছোটবেলা থেকেই আমাদের সন্তানকে ভালবাসা শিখাতে হবে। শুধু পাঠ্যবইয়ে চোখ রেখেই বাকি সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া বন্ধ করতে হবে প্রথম থেকেই।
আর 'তোমাদের সন্তান এতো পিছিয়ে!! ওকে এবার পড়াশোনার জন্য একটু চাপ দাও",
"এ কি! সে এমন রেজাল্ট করলো!!! "এই ধরনের কথাবার্তা বলে কাউকে সবার সামনে ছোট করাও বন্ধ করতে হবে। তাহলে অন্তত নিজের শেষ জীবনের অসহায়ত্ব অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে পারবো আমরা!
রোকসানা আক্তার
সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান)
দি ফ্লাওয়ার্স কে জি এন্ড হাইস্কুল, মৌলভীবাজার।
মৌলভীবাজার।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন