নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই, হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//

ভোজ্যতেল, চিনি, চাল, আটা, ডাল, পেঁয়াজ, মশলাসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছ-মাংসের দাম আকাশচুম্বী। সম্প্রতি বেশ কিছু পণ্যের দাম কেজিতে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েকটি যৌক্তিক কারণ বাদ দিলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছেন। এ অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ও টিসিবির বাজারদরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল রোববার খোলা ও প্যাকেট আটা কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়। খোলা আটার দাম বাড়লেও প্যাকেটজাত আটার দাম বাড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাড়তি দামের প্যাকেটজাত আটা এখনো বাজারে আসেনি। এর আগে গত ১ মে খোলা আটা প্রতি কেজি ৪০ ও প্যাকেটজাত আটা ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

রোববার খোলা ময়দা ৬৫ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৭০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়েছে। গত ১ মে খোলা ময়দার কেজি ৫৫ ও প্যাকেট ময়দার কেজি ৬০ টাকা ছিল। যুদ্ধের আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি খোলা ময়দা ৪৮ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর জোয়ার সাহারা বাজারের ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পাইকারি দোকান থেকে গত সপ্তাহে আটার কেজির বস্তা ১৭৫০ টাকায় এবং ময়দার বস্তা ৩০৫০ টাকায় কিনে এনেছিলাম। রোববার আমাকে আটা ও ময়দার বস্তাপ্রতি আরো ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনে আনতে হয়েছে।’

আমদানি করা মোটা মসুর ডাল গতকাল খুচরায় ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। ১ মে যা ছিল ১০০ টাকা। আর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এই ডালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৯৫ টাকা।

কারওয়ান বাজারের মেসার্স নূরজাহান স্টোরের ব্যবসায়ী মো. তারেক বলেন, ‘আটা-ময়দা ও মসুর ডালের দাম আবার নতুন করে বেড়েছে। গত সপ্তাহে খোলা আটা ৪০ টাকা কেজি ছিল, এখন কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে। ময়দা ৬০ টাকা কেজি ছিল, কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকা হয়েছে। মসুর ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দেশি ১৪০ এবং মোটা ডাল ১১০ টাকা হয়েছে। ’ তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে গম বন্ধের ঘোষণায় বস্তাপ্রতি আটা-ময়দার দাম প্রায় ২০০ টাকা বেড়ে গেছে। ’

দাম বেড়েছে সয়াবিন তেলেরও। গতকাল বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা লিটারে বিক্রি হয়েছে। গত ১ মে এই তেল লিটারপ্রতি বিক্রি হয় ১৬০ টাকায়। আর যুদ্ধের আগে ২৩ ফেব্রুয়ারিতে এর দর ছিল ১৬৮ টাকা লিটার।

আমদানি করা পেঁয়াজ গতকাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গত ১ মে পেঁয়াজ কেজিতে বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকা। অবশ্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এই দাম ছিল ৫০ টাকা। পাইকারি বাজারে দাম কমলেও তার প্রভাব পড়ছে না খুচরা বাজারে।

রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পেঁয়াজ আমদানিকারক হাজি মো. মাজেদ বলেন, ‘গত তিন দিনের তুলনায় পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার আমরা পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৩০-৩২ টাকা কেজি। রোববার আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ২৮ টাকা কেজি দরে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। সরবরাহ প্রচুর রয়েছে। তাই দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ’

বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে আমদানি করা রসুনের। কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। রোববার আমদানি করা রসুন ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গত ১ মে এই রসুন ১২০ টাকায় কেনা যেত।

কারওয়ান বাজারের ভোগ্য পণ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম আরো এক দফা বেড়েছে। আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রতিবার নতুন চালানের ভোগ্য পণ্য কিনতে বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরাও বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিশ্ববাজারে কোনো পণ্যের ১০ শতাংশ দাম বাড়লে আমদানিকারকরা দেশীয় বাজারে ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে।

বাজারে আমদানি করা নিত্যপণ্যের সঙ্গে দেশীয় উৎপাদিত পণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। রোববার দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গত ১ মে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। একইভাবে দেশি রসুন গতকাল ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। ১ মে বিক্রি হয় ৫০ টাকায়।

দেশি ডাল রোববার ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। ১ মে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। রোববার লাল ডিম ১২০ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে। ১ মে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১১৫ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছিল।

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সারা বিশ্বেই মুদ্রাস্ফীতি চলছে। তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ছে। আবার একসময় ব্যবসায়ীরা এক কেজি পণ্য বিক্রি করে লাভ করতেন সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা, এখন লাভ করতে চান ৫০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির এটিও একটি বড় কারণ।’

তিনি বলেন, ‘আমদানিকারকরা সম্মিলিত হয়ে দাম বাড়িয়ে পণ্য বাজারে সরবরাহ করছেন। এদিকে বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে কিছু মানুষের আয় বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীরা যে দাম চাচ্ছেন সেই দামেই পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। এটিও মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ।’

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন