সুন্দরগঞ্জে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা||

আর মাত্র দেড় মাস পর মরা তিস্তা ভরায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বন্যায় ভাসবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। দীর্ঘ ৫১ বছরে এ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত বেড়িবাঁধটি সংস্কার, মেরামত, সংরক্ষণ না করায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে  বেড়িবাঁধের ৫০টি স্থান। 

গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল-মারুফ এবং প্রকল্প বান্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল বাঁধটির ২৬ কিলোমিটার পরিদর্শন করে ৩১টি স্থান ঝুকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন।

 

 গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পানি উন্নয়ন বোডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধটির ডানতীর কাপাসিয়া ইউনিয়নের কামারজানি হতে বামতীর তারাপুর ইউনিয়নের ঘগেয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে প্রায় ৫০টি স্থান ঝুকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। উপজেলা শহরের সাথে পূর্বাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এই বেরি বাঁধটি। বর্তমানে বাঁধটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পরায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই ৮টি ইউনিয়নের লোকজন এখন ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে শোভাগঞ্জ ভায়া বালার ছিঁড়া হয়ে উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। 

          

 বেলকা ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক রাজেন্দ্র কুমার সরকার জানান, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বেরি বাঁধটি মেরামত এবং সংস্কার করা হয়নি। সে কারণে বর্তমানে বেরি বাঁধটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত বছর বন্যায় বেলকা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থান ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় প্রশাসন বাঁশের প্যালাসাইটিং দিয়ে কোনমতে মেরামত করেন। বর্তমানে বেরি বাঁধটির অবস্থা খুবেই খারাপ। বন্যা আসা মাত্রই ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

 

 ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, বেড়িবাঁধটি ঝুকিপূর্ণ এবং হুমকির সস্মুখিন হওয়ায় বর্তমানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সে কারনে ২০ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা ও জেলা শহর হতে মালামাল এনে ব্যবসা করতে হচ্ছে। বাঁধটি সংস্কার ও মেরামত একান্ত প্রয়োজন। 

           

বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি স্থান বেড়িবাঁধটির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর বান্যার সময় তার ইউনিয়নের ১০টি স্থানে বন্যার পানি বাঁধের গর্ত দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। তাৎক্ষণিক মেরামত করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বেড়িবাঁধটি মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত এক মাস ধরে বাঁধটির উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সে কারণে কাপাসিয়া, শ্রীপুর, চন্ডিপুর, হরিপুর, কঞ্চিবাড়ি, শান্তিরাম বেলকা ইউনিয়নের লোকজন ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে উপজেলা শহরে যাওয়া আসা করছেন।    

         

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল-মারুফ জানান, গত সোমবার উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বাঁধটির প্রায় ৩১টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। বন্যার সময় যে কোন মর্হুতে ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে করে উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সে  কারণে আগাম পরিদর্শন পূর্বক মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।

        

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ  বেড়িবাঁধটি মেরামত এবং সংস্কারের অভাবে আসলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

 

 স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, বেড়িবাঁধটি সংস্কার এবং মেরামত জররুী হয়ে পরেছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংসদ আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বন্যার কবল থেকে বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন