খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন নিয়ে বিধিনিষেধ, থাকছে জেল-জরিমানা

gbn

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//

নিজেদের পণ্যের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি, প্রমাণ ছাড়া খাদ্যপণ্য স্বাস্থ্যকর বা পুষ্টিকর বলে প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না। এছাড়াও বিজ্ঞাপনে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের উপস্থিতি, একই ধরনের পণ্যের নিন্দা করাসহ বেশ কিছু বিধিনিষেধ নিয়ে ‘নিরাপদ খাদ্য (বিজ্ঞাপন ও দাবি) প্রবিধানমালা’ এর খসড়া প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এই আইন পাস হলে কেউ বিধান লঙ্ঘন করলে তাকে জরিমানা গুনতে হবে। এমনকি জেলও হতে পারে।

সোমবার (২৩ মে) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ অডিটোরিয়ামে এই খসড়া প্রবিধিমালা উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী এবং অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে। প্রবিধিমালা উপস্থাপন করেন কর্তৃপক্ষের সদস্য রেজাউল করিম।

 

প্রস্তাবিত প্রবিধানমালায় বিজ্ঞাপনের সাধারণ শর্তের মধ্যে রয়েছে- বিজ্ঞাপনের ভাষা, দৃশ্য, চিত্র, কিংবা নির্দেশনা ধর্মীয় অনুভূতি, সাম্প্রদায়িক চেতনা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং রাজনৈতিক অনুভূতির প্রতি পীড়াদায়ক হতে পারবে না। একইসঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কিছু দেখানো যাবে না। এছাড়া এ আইন কার্যকর হলে বিজ্ঞাপনে বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদেরা অংশ নিতে পারবেন না। সঙ্গে বাজারের প্রতিযোগী সমজাতীয় অন্য পণ্যের তুলনা বা নিন্দা করে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করা যাবে না। এমন কোনো বর্ণনা বা দাবি প্রচার করা যাবে না যার মাধ্যমে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতারিত হতে পারে।

খাদ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা বা দৈহিক আকার ও বর্ণকে কেন্দ্র করে কোনো কিছু প্রচার করা যাবে না। একইসঙ্গে আমদানিপণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে উন্নতমানের, এমন কিছু বিজ্ঞাপনে থাকতে পারবে না। এতে শিশুদের নিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণের বিষয়ে শর্ত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- শিশুর স্বাভাবিক বিশ্বাস ও সরলতাকে প্রতারণাপূর্ণ ও চাতুর্যের সঙ্গে কাজে লাগিয়ে কিছু প্রচার করা যাবে না। শিশুদের পরনিন্দা, অশ্লীল শব্দ, ঝগড়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে অংশ নেওয়া বাদ দিতে হবে।

আরও বলা হয়েছে- এমন কিছু দেখানো যাবে না যেখানে শিশুর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের নৈতিক, মানসিক বা শারীরিক ক্ষতি হতে পারে, এমন বিষয় বিজ্ঞাপনে থাকবে না এবং স্বাভাবিক বিশ্বাস ও সরলতাকে কাজে লাগানোর মতো কিছু প্রচার করা যাবে না। এছাড়া যেকোনো খাদ্য বা পানীয় পণ্যের বিজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যগত বিরূপ প্রভাব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণু প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেটা বিজ্ঞাপনে সুস্পষ্টভাবে প্রচার করতে হবে।

এ প্রবিধিমালায় আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এমন প্রচারণা করা যাবে না যেখানে আমদানি পণ্য দেশি পণ্যের থেকে উৎকৃষ্ট বলে মনে হয়।

বিজ্ঞাপনে দাবি প্রসঙ্গে বলা হয়, কোনো অসত্য, অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর দাবি বিজ্ঞাপনে করা যাবে না। সুষম খাবার সব ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে না, এমন প্রচার করা যাবে না। যেকোনো দাবির কার্যকর প্রমাণ ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকতে হবে। কোনো পণ্য প্রাকৃতিক, আসল, বিশুদ্ধ, তাজা, খাঁটি, প্রসিদ্ধ বা ঐতিহ্যবাহী এমন ব্র্যান্ডনাম, ট্রেডমার্ক বা অভিনব নাম দাবি করা যাবে না। এর বাইরেও দেশে প্রস্তুত করা মোড়কজাত খাদ্যের সংশ্লিষ্ট তথ্যের ক্ষেত্রে বাংলার পাশাপাশি এক বা একাধিক বিদেশি ভাষাও ব্যবহার করা যাবে। আমদানি করা মোড়কজাত খাদ্য অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রির ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন বিদেশি ভাষায় হলে সেখানে বাংলাও সংযুক্ত করতে খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোনো খাদ্য রোগের ঝুঁকি হ্রাসকারী বলে দাবি করা যাবে না। এমন প্রচারের জন্য ফি’সহ আবেদন যাচাই-বাছাই পূর্বক অনুমোদন দেবে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিজ্ঞাপনে দাবির ক্ষেত্রেও পূর্বানুমতির বিধান রাখা হয়েছে এ প্রবিধিমালায়।

এসব বিধান ভঙ্গ করলে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ এর ৪১ ও ৪২ ধারা অনুযায়ী ছয় মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড বা এক থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধে কমপক্ষে এক বছরের কারাদণ্ড বা চার লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে আইনের লঙ্ঘনের সাজা নিরাপদ খাদ্য আইনের ধারা ৫৮, ৫৯ ও ৬০ এর অনুযায়ী হতে পারে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইউম সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন।

আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, আগে নিরাপদ খাদ্য (বিজ্ঞাপন) প্রবিধানমালা করা হয়েছিল। গত বছর সে আইন সম্পর্কে মতামত নিতে গিয়ে বিজ্ঞাপনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ দাবির বিষয়টি সামনে আসে। এখন দাবির বিষয়গুলো সংযোজন করা হয়েছে।

অংশীজনদের মতামত পাওয়ার পর প্রবিধানমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে নিরাপদ খাদ্যের চেয়ারম্যান বলেন, পরে এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ও দাফতরিক প্রক্রিয়া শেষে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে ভেটিং শেষে গেজেটের মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন