চালের বাজারে স্বস্তি ফেরার লক্ষণ নেই

জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//

চালের বাজার যেন নিয়ন্ত্রণহীন। সরকারের দুই মন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন, দেশে চালের কোনো ঘাটতি নেই। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালের মজুতের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে স্থানীয় প্রশাসন। তারপরেও এই ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কোনো লক্ষণই নেই। বরং বেড়ে যে জায়গায় পৌঁছেছে সেখানে থাকলেই যেন স্বস্তি।

মিল মালিকেরা বলছেন, চালের ব্যবসায় বড় করপোরেট হাউস নেমে পড়েছে। আর অর্থ জোগান দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ৫০ টাকা কেজির চাল প্যাকেটে ঢুকেই ৭০-৭৫ টাকা হয়ে যাচ্ছে। তবে এ বছর হাওরে ফসল নষ্ট, আগাম বৃষ্টিতে চাল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণ দেখিয়ে বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়ানো হয়েছে।

 

গতকাল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত বৈঠকে বাংলাদেশ অটো মেজর হাস্কিং মিল মালিক সমিতি ধান-চালের অবৈধ মজুতের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। সংগঠনের সহসভাপতি শহিদুর রহমান পাটোয়ারি (মোহন) অভিযোগ করেন, স্টক বিজনেস যারা করেন তাদের কাছে অনেক সময় মিলারদের থেকে বেশি ধান মজুত থাকে। যা চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।

বৈঠকে দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বন্যায় বোরো ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আগের থেকে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে ধান। চাল উৎপাদনে ব্যাংক যুক্ত হওয়ায় পুঁজি বেড়েছে। ধান কেনার প্রতিযোগিতাও বাড়ছে। যা চালের দাম বৃদ্ধির কারণ।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ৫০ টাকার চাল প্যাকেটে ঢুকেই ৭০-৭৫ টাকা হয়ে যাচ্ছে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তারা প্যাকেটজাত খাবার খাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ এখন মোটা চাল খেতে চাচ্ছে না। বাজারে মোটা চালের ক্রেতা নেই। মোটা চাল চিকন করা হচ্ছে। সেই চাল বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন মানুষ। চালের বাজার মূলত খাদ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে। সেখান থেকে কোনো সহযোগিতা চাওয়া হলে করা হবে। দেশের বাজারে চালের কোনো সংকট নাই। কোথাও কোথাও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে।

এদিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গতকাল এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বলেন, একটি মহল খাদ্যঘাটতির বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। তবে বাংলাদেশে খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা নেই। মজুতদারির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরালো হবে। তিনি বলেন, দুই কারণে সরকার ধান চাল সংগ্রহ করে। প্রথমত সরকার ধান কিনলে কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়। দ্বিতীয়ত জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। বড় বড় করপোরেট হাউস ধান চাল সংগ্রহ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মিল না থাকলে তারা যেন এ ব্যবসায় যুক্ত না হতে পারে সেটা নিশ্চিতে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন তিনি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে চাল মজুতের অভিযোগে ১০ লাখ ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, প্রদর্শিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করাসহ বিভিন্ন চার প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার বলেন, এখন পর্যন্ত প্রশাসনের অভিযানে বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। সারা দেশে যেভাবে অভিযান হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে কিছুটা হলেও চালের দাম কমতে পারে। চাল উৎপাদনের সনদ না থাকায় আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরে আকিজের চালের কারখানায় গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিষ্ঠানটির নামে কোনো মিল না থাকায় চাল উৎপাদন নিজেরাই বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আলমগীর কবির।

চট্টগ্রামে বেশি দামে বিক্রি ও অতিরিক্ত চাল মজুত করায় নগরীর চাক্তাই এলাকার একটি চালের আড়ত সিলগালা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই অভিযানে ওই এলাকার আরও তিনটি আড়তকে জরিমানা করা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন