চমেকের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ ৯৩, ডা. সামন্ত লালের নেতৃত্বে কাল যাবে বিশেষজ্ঞ দল

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকা- ও বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত এপর্যন্ত ৯৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দিতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ একটি দল আগামীকাল সোমবার চট্টগ্রাম যাচ্ছে। 
আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। দলের অপর দুই সদস্য- ডা. হেদায়েত আলী খান ও ডা. হোসেন ইমাম বলে জানান।
রোববার (৫ জুন) দুপুরে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, কারো চোখ ও পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ কারও হাত উড়ে গেছে, কারো পা। আবার কারও পেট ছিঁড়ে বের হয়ে গেছে নাড়িভুঁড়ি। আবার কারও কারও শরীরের অর্ধেক অংশই পোড়া। হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসাধীন ও নিহতদের স্বজনদের গগনবিদারি আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চমেক হাসপাতালের পরিবেশ।
হতাহতদের চিকিৎসা দেওয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. কে এন তানভীর বলেন, ‘গতরাত ১২টা থেকে রোগী আসা শুরু হয়। ৩টা পর্যন্ত এত বেশি রোগী আসে যে আমরা নিশ্বাস ফেলার সময় পর্যন্ত পাইনি। ৭০ শতাংশের বেশি রোগী দগ্ধ ছিল। বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি অনেকের হাত-পা, আবার কারও কারও পেট ছিঁড়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গিয়েছিল।’  
মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে দায়িত্বরত নার্স সোমা দাস বলেন, অগ্নিকা-ের ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে। তাদের সেবা চলছে। একসঙ্গে এত দগ্ধ রোগী আর কখনো দেখিনি আমি।
এদের মধ্যে মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ নামে একজন রয়েছেন। ওয়ার্ডের প্রবেশ পথের ডান পাশের বেডে শুয়ে আছেন তিনি। পেটের অর্ধেক অংশ ঝলসে গেছে। ব্যান্ডেজ লাগানো পুরো পেটে। পাশে দাঁড়িয়ে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন তার মামাতো ভাই রাসেল। 
তিনি বলেন, সাইফুল্লাহ ওখানে স্টোরকিপার হিসেবে ৬ বছর ধরে কাজ করছেন। গতকালের ঘটনা জানার পরপরই তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। পরে মেডিকেলে এসে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেলাম। ভালো করে কথা বলতে পারছেন না। পরিস্থিতি কেমন সেটাও এখন ভালো করে বলা যাচ্ছে না। 
দগ্ধ আরেকজন রফিক উদ্দিনের দুই হাত এবং মাথায় ব্যান্ডেজ লাগানো। দুই পায়ের আঙুলও পুড়ে গেছে। তার চাচাতো ভাই তাহের উদ্দিন বলেন, ঘটনার পর ভাইয়ের ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি। এরপর ভাইকে ফোন দিয়ে না পেয়ে সীতাকুন্ডে চলে আসি। সেখানে না পেয়ে মেডিকেল এসে জানতে পারি তিনি ৩৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি। এরপর বাড়িতে খবর জানাই।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত ও ২ শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় তাদের কারও মাথায় আঘাত লেগেছে, কারও আবার দুই হাতই ঝলসে গেছে। একজনের পেটের এক পাশ ভেতরে ঢুকে গেছে। আহত ব্যক্তিদের আর্তনাদ আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে গেছে চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিট।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন