শাহীন গোলদার,সাতক্ষীরা ||
ঈদুল আজহার আগেই ভারত থেকে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে গরু না আসায় দেশীয়ও গরুর কদর বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশী। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও জেলাতে চাহিদার চেয়ে পশুর মজুত বৃদ্ধি পাওয়ায় নায্য দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন জেলার খামারিরা। খামারিরা বলছেন, চলতি বছর গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু মোটাতাজাকরণে ব্যয় বেড়েছে অনেক। সে অনুযায়ী দাম না পেলে তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
একই সাথে দেশী গরুর উৎপাদন এবং চাহিদাও বেড়েছে কয়েক গুন। তবে গো খাদ্যের দাম বেশী থাকায় লাভ আশা খুবই কম বলে জানালেন খামারিরা।
জেলায় সাড়ে ১ লাখ ৮ হাজার পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এবার কোরবানিতে জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রাণী সম্পদ বিভাগ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ জানায়, জেলায় এবছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৯০৭টি। আর কোরবানির জন্য মোট পশু মজুত রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৫টি। যা চাহিদার চেয়ে ৪৭ হাজার ৯৮টি পশু বেশি। জেলার সাত উপজেলার ৯ হাজার ৯৩০টি খামারসহ পারিবারিকভাবে এসব পশু লালন পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ২৮ হাজার ৮০৩টি, ছাগল ৭৪ হাজার ৪৯৯টি, ভেড়া ৩ হাজার ৭০৭টি ও মহিষ রয়েছে ৯৯৬টি।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার রহিমা এগ্রে ফার্ম মালিক মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন জানান,তার খামারে ২৭ টি গরু আছে । তার মধ্যে মেসি নামের সবচেয়ে বড় গরু আছে তার ওজন রয়েছে ১৬ মন। দাম ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া সবচেয়ে ছোট গরুর দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ।
তিনি আরও জানান, গো-খাদ্যের এত দাম যে মাসে খরচ সাত হাজার টাকা পড়ে যাচ্ছে। তাই কোরবানির বাজারে খামারিরা বেশি দাম চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মানুষের হাতেও টাকা কম। তাই পশুর দাম কেমন উঠবে তা নিয়ে তিনি শঙ্কিত রয়েছেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গরু খামারি শহিদুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছরধরে গরু পালন করে আসছেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে দেশি ও বিদেশি জাতের ১৮টি গরু রয়েছে।
তিনি আরও জানান, খামারটিতে গরু ক্রয়ের জন্য এখনও পর্যন্ত বাইরে থেকে কোন বেপারি আসেননি। স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকজন বেপারি আসলেও প্রত্যাশিত অনুযায়ী কোন দাম বলছেন তারা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আব্দুর রউফ জানান, এবছর সাতক্ষীরা জেলার চাহিদার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৪৮ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সারা বছর খামারিরা অপেক্ষায় থাকেন, কোরবানির সময় আসলে কিছু লাভবান হওয়ার আশায়। তবে একদিকে চাহিদার চেয়ে পশুর যোগান বেশি তারউপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা হওয়ায় সেখানে অপেক্ষাকৃত কম দামে পশু বিক্রয় হচ্ছে। যার প্রভাব কিছুটা হলেও জেলার বাজারে পড়বে। তবে পদ্মা সেতু হওয়ায় খামারিরা ইচ্ছে করলে কম সময়ের ভিতরে দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে তাদের গরু সরবরাহ করতে পারবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ন কবির জানান, কোরবানি ঈদকে ঘিরে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে। জেলার কোন সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে চোরাই গরু দেশে প্রবেশ ঠেকাতে এবার কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন।
তিনি আরও বলেন, বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তারা যেন সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করে। আর হাটগুলোতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যদি কোন ক্রেতা-বিক্রেতারা নগদ টাকা পরিবহনে অসুবিধা মনে করে, তাহলে তারা জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিতে পারবে। বড় ধরনের নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রেও জেলা প্রশাসনের সহায়তা থাকবে। আশা করছি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে নিরাপদে পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন