জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
শ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লিবিয়া, মিশর, কেনিয়া, ইয়েমেন, ভারত, পাকিস্তান এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে রোববার উদযাপন করা হচ্ছে ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।
পাশপাশি, চলতি বছর সৌদি আরবে যে দশ লাখ যাত্রী হজ করতে গেছেন, তাদের আনুষ্ঠানিকতাও শেষ হবে আজ। হজ সংক্রান্ত ধর্মীয় বিধিসমূহের মধ্যে সর্বশেষটি হলো পশু কোরবানি।
আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আজহা উদযাপন করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। এই দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে গরু-ছাগল-মহিষ-উট-দুম্বা-ভেড়া প্রভৃতি গৃহপালিত পশু কোরবানি করেন। ইসলাম ধর্মে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য এই বিষয়টি ওয়াজিব বা অবশ্য পালনীয়।
ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী, জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২— এই তিন দিন পশু কোরবানি করতে পারবেন মুসলিমরা। কোরবানি করা সেই পশুর মাংস ভাগ করতে হবে সমান তিন ভাগে; একভাগ যিনি কোরবানি দিচ্ছেন তার, অপর ভাগ আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীর এবং তৃতীয় ভাগ অসহায় দরিদ্র লোকজনের।
ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তানসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন দেশ এবং যেসব দেশে মুসলিম সম্প্রদায় বড়, ঈদুল আজহার দিনে সেসব দেশে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
তবে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দামে যে ঊর্ধ্বগতি, স্বাভাবিক ভাবেই তার আঁচ লেগেছে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়েও। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের বহু মুসলিম, যারা গত বছরও পশুর কোরবানি দিয়েছেন— চলতি বছর পারেননি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিগত বিভিন্ন বছরের তুলনায় ২০২২ সালে বিশ্বজুড়েই কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে কম।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ আফগানিস্তানে অন্যান্য বছর কোরবানির ঈদের আগে পশু কেনার হুড়োহুড়ি চললেও চলতি বছর দেখা গেছে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র।
ক্ষমতাসীন তালেবান গোষ্ঠীর ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধজ্ঞা থাকায় গত বছর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বৈশ্বিক দাতা সংস্থাগুলো আফগানিস্তানকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। ফলে দেশটির অর্থনীতি পৌঁছেছে চরম নাজুক অবস্থায়।
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার ই শরিফের একটি কোরবানির হাটে পশু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাদির শনিবার আল জাজিরাকে জানান, অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে চলতি বছর চরম মন্দাভাব চলছে কোরবানির পশুর বাজারে।
‘সবাই পশু কোরবানি করতে চায়, কিন্তু সামর্থ্যবান মানুষের সংখ্যা খুবই কম। গত বছর এই সময়ে আমি ৪০ থেকে ৫০টি পশু বিক্রি করেছিলাম; কিন্তু চলতি বছর এখন পর্যন্ত মাত্র ৪০ থেকে ৫০টি পশু বিক্রি করতে পেরেছি।’
প্রায় একই অবস্থা ফিলিস্তিনেও। দেশটির অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের আল শাতি শরনার্থী শিবিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায়— শিবিরের একটি স্থানে কোবানির পশুর নাড়িভুঁড়ি ও খুর বিতরণ করা হচ্ছে, আর সেসব নিতে লাইন ধরে দাঁড়িয়েছে শিশুরা। তাদের সবার মুখে আনন্দ। যেসব শরণার্থীর মাংস কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য এই ব্যবস্থা।
গাজার পশুর হাটগুলোও ছিল অনেকটাই ফাঁকা, ক্রেতার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। গাজার মধ্যাঞ্চলীয় এলাকা দাইর আল বালাহের একটি পশুর হাটে ব্যবসায়ী আবু মুস্তফা আল জাজিরাকে জানান, বিগত বিভিন্ন বছরের তুলনায় চলতি বছর ফিলিস্তিনে পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় চারগুণ, সেই হিসেবে পশুপালন বাবদ ব্যায়ও চলতি বছর ছিল বেশি; কিন্তু সেই তুলনায় পশু প্রায় বিক্রিই হচ্ছে না।
‘আমরা শেষ হয়ে গেছি,’ আলজাজিরাকে বলেন মুস্তফা।
অন্যান্য ঈদে ফিলিস্তিনের রামাল্লাহ ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন সড়কের ধারে ফল, মিষ্টি ও ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের পসরা সাজিয়ে বসতেন ব্যবসায়ীরা; কিন্তু চলতি বছর সেসব সড়ক ছিল অনেকটাই ফাঁকা।
ফিলিস্তিনে নারীদের একটি ঈদের জামাত
রামাল্লার ফল ব্যবসায়ী বালিগাহ হামদি বলেন, ‘অন্যান্য বছর এই দিনে ফল, মিষ্টি ও বাদামের ব্যাপক চাহিদা থাকতে। কিন্তু যেমনটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন…এবার এসব কেনার সামর্থ্য অধিকাংশ মানুষেরই নেই।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও সেই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশসমূহের জারি করা বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে একদিকে বিশ্বজুড়ে যেমন গম ও মাংসের দাম বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে পশুখাদ্য ও সারের দাম।
ফলে চলতি বছর বিশ্বজুড়েই কোরবানির পশুর দাম চড়া।
গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত কবলিত লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির হাটগুলোতে ব্যবসায়ীরা এক একটি ভেড়ার দাম হাঁকা হচ্ছে ২ হাজার ১০০ ডলার! ফলে যেসব হাটে গিয়েছিলেন পশু কিনতে, তাদের অধিকাংশই ছিটকে বেরিয়ে আসছেন।
সাবরি আল হাদি নামের এক ক্রেতা আলজাজিরাকে বলেন, ‘পশুর মূল্য অসম্ভব পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এটা রীতিমতো পাগলামি।’
তবে জীবনযাত্রার ব্যয় ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জেরে নাভিশ্বাস উঠলেও মহামারির আড়াই বছর পর বিশ্বজুড়ে ঈদুল আজহা উদযাপন অনেকটা মহামারিপূর্ব সময়ের রূপ নেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন