জিবিনিউজ 24 ডেস্ক//
বরিস জনসনের পদত্যাগের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী খুঁজে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে যুক্তরাজ্যে। সেই লড়াইয়ে মুখোমুখি সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাস। প্রাথমিক বাছাইয়ে যারা ছিলেন, সবাই ছিটকে গেছেন। এবার ঋষি ও লিজের মধ্যেই একজন হবেন বরিসের উত্তরসূরি।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষিকে ঘিরে যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে। কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে, এত কাছে এসেও হয়তো শেষ পর্যন্ত মসনদ পর্যন্ত পৌঁছানো হবে না তার। পরিস্থিতি যা, তা দেখে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ কিন্তু মনে করছেন, লিজই হতে চলেছে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী। তার আর ঋষির মাঝখানে কেবল একটা ব্যালট ও ৬ সপ্তাহের ব্যবধান।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, দলের সদস্যদের ভোটাভুটিতে অনেকটা এগিয়ে ঋষির প্রতিদ্বন্দ্বী লিজ ট্রাস। আবার জনসনেরও পছন্দের প্রার্থী ট্রাস। ভোটাভুটিতে যে সেটা অনেকটাই প্রভাব ফেলবে তা নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও আগামী সোমবার প্রধানমন্ত্রী বিতর্কের সময় দলীয় সদস্য ও ব্রিটিশ জনতাকে প্রভাবিত করার সুযোগ থাকছে ঋষির। তবুও জয় ক্রমেই তার হাত থেকে পিছলে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রচারে ক্রমে জোর বাড়িয়েছেন ট্রাস। তিনি নিজেই নিজের সঙ্গে তুলনা করছেন প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের। যদিও একসময় তাকে থ্যাচারের বিরোধিতা করতেই দেখা গিয়েছে। কিন্তু এবার থ্যাচারের ‘ছায়া’ হয়েই ব্রিটেনের মসনদ দখলে মরিয়া ট্রাস। সম্প্রতি তাকে পূর্ব ইউরোপে একটি ট্যাঙ্কে ‘পোজ ‘ দিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে। ঠিক এ ধরনেরই ছবি তুলেছিলেন থ্যাচারও। কোনো সন্দেহ নেই, সেই পুরনো আবেগ ফিরিয়ে এনেই বাজিমাতের সমীকরণ তৈরি করে ফেলছেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব।
২০১৯ সালে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হন বরিস জনসন। তার পদত্যাগের ঘোষণার পর থেকেই ব্রিটেন জুড়ে আলোচনা, এবার কে? আপাতত যা পরিস্থিতি, লিজ ট্রাসই শেষ হাসি হাসতে চলেছেন। তেমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রথম থেকে পঞ্চম রাউন্ড পর্যন্ত লড়াইয়ে ভোট দিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরাই। আসল লড়াইটা হতে যাচ্ছে এবার। শুধু ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে নির্বাচিত দলীয় এমপিরাই নন, চূড়ান্ত পর্বে ভোট দেবেন কনজারভেটিভ পার্টির দেড় লাখের বেশি সদস্য। এই সংখ্যা কত তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। ২০১৯ সালে বরিস জনসনকে নির্বাচিত করার সময় দলের সদস্য সংখ্যা ছিল এক লাখ ৬০ হাজার। তবে এ বার সে সংখ্যা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, বরিস জনসন সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। মূলত ‘পার্টিগেট’ থেকে শুরু হয়েছিল জনসন সরকারের ভাবমূর্তির পতন। ব্রিটেনে কঠোর কোভিড লকডাউন চলাকালে সরকারি বাসভবনে মদের পার্টি বসানো নিয়ে দলের মধ্যেই অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হয়েছিলেন বরিস।
এরপর থেকে একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে জনসন সরকার। কনজারভেটিভ পার্টির ডেপুটি চিফ হুইপ ক্রিস পিনচার-এর যৌন কেলেঙ্কারি কফিনে শেষ পেরেক মেরে দেয়। মত্ত অবস্থায় এক ব্যক্তির পুরুষাঙ্গ চেপে ধরার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন পিনচার। প্রথম থেকে পুরোটা জেনেও, অস্বীকার করেছিলেন বরিস। পরে তার মিথ্যাচার ধরা পড়ে যায়।
এরপরই জনসন সরকারের অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন ঋষি সুনাক। যার সূত্র ধরে একের পর এক সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ইস্তফা দেন এবং বরিস জনসনও পদ ছাড়তে বাধ্য হন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন