ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলে রাব্বী মিয়া যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত ডেপুটি স্পিকার নিউইয়র্কে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। আগামীকাল সোমবার (২৪ জুলাই) তার মরদেহ দেশে আনা হবে।
শুক্রবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এসময় হাসপাতালে তার বড় মেয়ে ফাহিমা রাব্বী রিটা এবং একান্ত সচিব তৌফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি তিন মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার পরিবার দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
নিউইয়র্ক থেকে এয়ার এমিরেটসের বিমানে আগামীকাল সোমবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। এর আগে রোববার স্থানীয় সময় বাদ জোহর নিউইয়র্কের জ্যামাইকার মুসলিম সেন্টারে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
ডেপুটি স্পিকারের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
জানা গেছে, মরদেহ বাংলাদেশে আনার পর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নেয়া হবে জাতীয় ঈদগাহ মাঠ প্রাঙ্গণে। সেখানে জানাজা শেষে হেলিকপ্টারযোগে ডেপুটি স্পিকারের মরদেহ আনা হবে গাইবান্ধার সাঘাটায়। বাদ যোহর সাঘাটার ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ আসর উপজেলার গটিয়া গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
ডেপুটি স্পিকারের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদিয়ে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দশম সংসদ থেকে তিনি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ১১নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে ও তিনি কাজ করেছেন।
এদিকে ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শোকবার্তায় তিনি ফজলে রাব্বী মিয়ার সংসদ পরিচালনায় তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশে ফজলে রাব্বীর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
পৃথক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই ফজলে রাব্বী মিয়া আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৬২-এর শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এক শোক বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে আইনজীবী মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। জাতি চিরকাল তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শোকবার্তায় ফজলে রাব্বী মিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ফজলে রাব্বী মিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান জাতীয় সংসদের হুইপ ও গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনি।
শোক জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী জনাব, ওবায়দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, চিফ হুইপ নুর- ই আলম চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা। এছাড়া পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এবং পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) আহ্বায়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র ও সদস্য সচিব কাজী সোহাগ শোক প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন সুন্দরগঞ্জের ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, গোবিন্দগঞ্জের প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী এমপি, সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ির অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবীর, গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মো. মতলুবর রহমান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল সরকার আলম লেবু, সাদুল্যাপুরের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান বিপ্লব, পলাশবাড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ,কে,এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান, ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ, সাঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি, পলাশবাড়ি পৌরসভার মেয়র গোলাম সারওয়ার বিপ্লব সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুর রশিদ রেজা সরকার ডাবলু, গাইবান্ধা জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরহাদ আব্দুল হারুন বাবলু, সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক মৃদুল মোস্তাফিজ ঝন্টু, গাইবান্ধা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাড. আহসানুল করিম লাছু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন