লন্ডন থেকে শেখ মহিতুর রহমান বাবলু : আব্দৌলি জোব গাম্বিয়ার নাগরিক।স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ব্রিটেনে।হলিডে শেষে নিজ দেশ থেকে ফেরার পথে ইউকে রেসিডেন্স পারমিট কার্ড হারিয়ে ফেলেন তিনি । শুরু হয় মানবেতর জীবন যাপন। অনাহারে অর্ধাহারে টয়লেটের ট্যাবের পানি পান করে প্যারিসের চার্লস দে গুল বিমানবন্দরে দুই সপ্তাহ বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করেন জোব ।না এটা টম হ্যাংকসের দ্যা টার্মিনাল ছবির দৃশ্য নয়। সম্প্রতি ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনা।যা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে কমিউনিটিতে ।
ব্রিটেনে বসবাসরত অভিবাসীরা তাদের রেসিডেন্স পারমিট নিজ দেশে বা ব্রিটেনে হারিয়ে ফেললে পরবর্তীতে কি করণীয় সে ব্যাপারে স্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকলেও থার্ড কান্ট্রিতে এমন বিড়ম্বনার মুখোমুখি হলে করণীয় কি তার কোনো ব্যাখ্যা বা সুইস্পষ্ট আইন ব্রিটেনে নেই। ঠিক সে কারণে ওয়েস্ট মিডল্যান্ডে বসবাসরত ৪৮ বছর বয়স্ক জোবের এই ভয়াবহ পরিণতি। অবশেষে মানবতার এই নির্মম রসিকতা ও আইনের সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে জোবকে অল্প সময়ের মধ্যে মুক্ত করেন বাংলাদেশী স্বনামধন্য তরুণ আইনজীবী ড. সজীব হোসেন। কিন্তু কিভাবে এই অসাধ্য কাজ এতো অল্প সময় সমাধান করলেন তিনি ?
কমিউনিটিতে সবার পরিচিত মুখ ড. সজীব হোসেন বলেন প্রথমে তিনি জোবকে আসস্থ করে বলেন ভয় পাবার কিছু নেই। আইন না থাকলেও আইন তৈরী করে তাকে তার পরিবারের কাছে দ্রুত ফিরিয়ে দেবার জন্য প্রয়জনীয় সব পদক্ষেপ তিনি নেবেন।
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ড. সজীব হোম অফিস কে দীর্ঘ দুই সপ্তাহ যাবৎ এয়ারপোর্টে মানবেতর জীবন যাপন করা জোবকে ব্রিটেনে আসার অনুমতি দিতে অনুরোধ করেন ।মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হোম অফিস বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে তারা জানান জোবের সব কিছু ঠিক আছে কিন্তু আইন না থাকায় তাকে ব্রিটেনে প্রবেশের অনুমতি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।জোবকে নিজ দেশ গাম্বিয়া ফেরত গিয়ে সেখান থেকে আবেদন করে নতুন রেসিডেন্স পারমিট কার্ড নিয়ে ব্রিটেনে আসার পরামর্শ দেয় হোম অফিস।
এবার মানবিক বিবেচনা ,পেশাগত দায়বদ্ধতা ,অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ব্যাপারটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মহামান্য আদালতের শরণাপন্ন হন ড. সজীব ।আদালতে দুটি পৃথক আবেদন করেন তিনি।সব দেখে শুনে আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেন। হোম অফিস কে ১২ ঘন্টার মধ্যে জোবের সমস্যার সমাধান করতে নির্দেশ দেয়া হয় আদালত থেকে ।এতক্ষনে নড়ে চড়ে বসে হোম অফিস।
আদালতের ১২ ঘন্টার পরিপেক্ষিতে হোম অফিস তিন দিনের সময় চাইলে আদালত তাও নাকচ করে দেয়। অবশেষে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউকে রেসিডেন্স পারমিট কার্ড ছাড়াই ব্রিটেনে প্রবেশের অনুমতি মেলে নরকতুল্য জেলখানায় দুই সপ্তাহ ব্যাপী বেঁচে থাকা গাম্বিয়ার নাগরিক আব্দৌলি জোবের।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও লাইভে এসে জোব বলেন , এয়ারলাইন্স বা এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ কেউ তার দায়িত্ব নেয়নি। কয়েকদিনের মাথায় পয়সা শেষ হয়ে গেলে তিনি না খেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে টয়লেটের ট্যাবের পানি পান করে যাত্রীদের চেয়ারে শুয়ে দিন কাটিয়েছেন।এ সময় তিনি তার ছেলের ১২ তম জন্মবার্ষিকী মিস করেছেন। দিনের পর দিন জীবন থেকে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় একসময় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি। এ সময় তাকে জরুরি চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এয়ারপোর্টের যাত্রীদের কেউ কেউ তার দিকে অবজ্ঞার চোখে তাকিয়েছেন অনেকে আবার সহানুভূতি দেখিয়ে খেতে দিয়েছেন।শরীর ও মুখের দুর্গন্ধে কেউ তার কাছে ভিড়তেন না।এটা ছিল আমার জীবনের নরক তুল্য জেলখানায় বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা বললেন জোব ।
এ ধরনের একটি জটিল ও কঠিন মামলার অবিশ্বাস্য সফলতায় বাংলাদেশী একজন তরুণ আইনজীবী হিসাবে ড. সজীব হোসেনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন "মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়।সুতরাং মানবতা রক্ষায় প্রয়োজনে আইন তৈরি করতে হবে। পৃথিবীর সব দেশে এভাবে নতুন আইন তৈরি হয়ে থাকে। তাছাড়া আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হওয়ার মাঝে একধরনের আলাদা তৃপ্তিবোধ আছে"।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন