জিবিনিউজ24ডেস্ক//
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সংসদ সদস্যগণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, এমডিজি অর্জনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এসডিজির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও নীতি বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে পার্লামেন্টারিয়ানরাও সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অ্যাম্বাসেডর ইব পেটারসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে স্পিকার এসব কথা বলেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই বাংলাদেশে পার্লামেন্টারিয়ানরা জনগণের কল্যাণে অধিক মাত্রায় আত্মনিয়োগ করছেন।
স্পিকার বলেন, সমকালীন বিশ্বে নতুন নতুন সম্ভাবনা যেমন সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি নতুন নতুন সমস্যারও উদ্ভব হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা, নদী দুষণ, বায়ু দুষণ, কার্বন নিঃসরণসহ নানাবিধ সমস্যা মানুষকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসব সমস্যা নিরসনের জন্য পার্লামেন্টারিয়ানদেরও সচেতন ও সচেষ্ট হতে হবে। এই লক্ষ্যে তাদের জনসম্পৃক্ততা আরো জোরালো করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে তারা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে পারেন।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন ইস্যুতে পার্লামেন্টারিয়ানদের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে স্পিকার বলেন, স্পিকারের নেতৃত্বে ২৫ জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পার্লামেন্টারিয়ানস অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিএপিপিডি) গঠন করা হয়েছে। বিএপিপিডি মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও পরিবার পরিকল্পনা, বাল্যবিয়ে ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং যুব উন্নয়ন ও জনসংখ্যার বহুমাত্রিকতা- এই তিনটি ইস্যুতে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কাজ করে আসছে। এসব সমস্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কি কি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যরা পর্যালোচনা করে করনীয় নির্ধারণ করছেন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করছেন।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গৃহীত সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গোচরে আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তৃণমূলের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে সংসদ সদস্যরা সমস্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে সচেতনতামূলক সভা করছেন। এতে করে সংসদ সদস্যরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ ভুক্তভোগীদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছেন। এই সমস্যাগুলো তারা সংসদ অধিবেশনসহ বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরছেন।
স্পিকার বলেন, স্কুল পর্যায়ে বিশেষ করে ছাত্রীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাইলটভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সেসব প্রতিষ্ঠানে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয় কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে। এসব কার্যক্রমে আরো অধিক মাত্রায় কারিগরি সহযোগিতার প্রয়োজন হবে বলে স্পিকার উল্লেখ করেন।
এ ধরনের সহযোগিতা দিতে ইউএনএফপিএ প্রস্তুত বলে ইব পেটারসেন জানান। পেটারসেন আরো জানান, ইউএনএফপিএ সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে যুব জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আরো জোরালো কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহী। মি. পিটারসেন জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই তা নিরসনে আরো জোরালো কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। স্পিকার তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, জাতীয় অর্থনীতি তথা জিডিপিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
স্পিকার বলেন, সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যরা যুব জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারেন। সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের পেছনে ফেলে কোনো সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তাই নারীর উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম চলমান আছে। এর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।
বৈঠকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব এম এ কামাল বিল্লাহ, বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর শাহানারা মনিকা এবং ইউএনএফপিএ’র পক্ষ থেকে রিজিওনাল স্পেশালিস্ট ইসাবেলা জেরালডিন আদজাই উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন