জিবিনিউজ24ডেস্ক//
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা মানুষের জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেবল আমরা ভুক্তভোগী নই, সারা বিশ্বের মানুষই ভুক্তভোগী। মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। সেই কষ্ট লাঘবের জন্য আরও কী কী করা যায় তার জন্য প্রতিনিয়ত আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মানুষের কষ্টটা যে বুঝি না, তা নয়।
রোববার (১৪ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তো কিছু লোক থাকেই, প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে খামোখা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়, ওই ছুতা ধরে— সেটা হচ্ছে কিছু কিছু। হঠাৎ এত দাম তো বাড়ার কথা নয় প্রত্যেক জিনিসের।
তিনি বলেন, আমাদের বিরোধীরাও একটা সুযোগ পাচ্ছে। তারা আন্দোলন করছে। সেটা করুক, আমি তো চাচ্ছি, আমি নির্দেশ দিয়েছি— তারা আন্দোলন করছে, করতে দাও। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করবে, আমি আসতে দেব। খবরদার, তাদের কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়, বিরক্ত করা না হয়। তারা আন্দোলন করতে চায়, করুক, অসুবিধা কী?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করছি, সেটা দেশের মানুষ জানে ও বোঝে। বিরোধী দল সুযোগ যখন পাচ্ছে, সেটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা যদি বেশি করতে চায়, এর প্রভাবে তো দেশের মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এটাও তাদের বোঝা উচিত।
বিরোধী দলের আন্দোলনের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আন্দোলন করে তারা কতটুকু সফল হবে সেটা জানি না। কিন্তু যেটা করছে তাতে দেশের জন্য আরও ক্ষতি হবে। আমরা সেটা সামাল দিতে পারব, সেই বিশ্বাস আমার আছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক
যখনই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমবে সরকার তাতে সমন্বয় করবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সেটা আমার নির্দেশ রয়েছে, তা করে দিচ্ছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার সীমিত করতে হবে। হয়তো কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যখন চালু হবে তখন বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটা দূর হয়ে যাবে।
নির্বাচনি ইশতেহার পূরণ করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যা যা ওয়াদা দিয়েছি সেগুলো পূরণ করেছি। করোনাভাইরাস, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দেশের কোনো সমস্যা হতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিষয়গুলোতে আমরা আমদানি-নির্ভর সেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নিজ নিজ জমিতে সবাইকে উৎপাদন করতে হবে। আমাদের খাবারটা যেন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি, বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয়, সেই ব্যবস্থাটাই আমাদের নিতে হবে।
নিষেধাজ্ঞায় আমেরিকা ও রাশিয়ার লাভ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, রুবলের দামও বাড়ছে, ডলারের দামও বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী রুবল ও ডলার স্টক হয়ে গেছে। মরছে সব দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য চরম দুর্ভোগ। সব দেশের একই অবস্থা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধ মানুষের জীবনে সর্বনাশটা ডেকে এনেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট কারবালার চেয়েও জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটে। আমার শুধু একটা প্রশ্নই জাগে মনে যে, আমার বাবা-মা-ভাইয়েরা কী অপরাধটা করেছিল? কেন এভাবে হত্যা করা হলো? এই শূন্য হাতে একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ এবং একটা প্রদেশ, তাকে রাষ্ট্রে উন্নীত করা এবং এই বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা.. হাতে সময় পেলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর, কোনো সম্পদ ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) শুধু একটা কথাই বলেছিলেন, মাটি আর মানুষ হচ্ছে আমার সম্পদ। এই মাটি আর মানুষের ওপর নির্ভর করেই কিন্তু তিনি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে দিয়ে যান। তার লক্ষ্য ছিল, ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে একটা নতুন সমাজ দেবেন, এই ঔপনিবেশিক আমলের যে প্রশাসনিক কাঠামো সেটা ভেঙে গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো তিনি করতে চেয়েছিলেন। গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো করার জন্য একটা বিরাট পরিবর্তন তিনি আনতে চেয়েছিলেন। এই গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তিনি তৃণমূলের মানুষের কাছে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন