জিবিনিউজ24ডেস্ক//
রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার দুর্ঘটনা যদি নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকার কারণে ঘটে, তবে তা স্পষ্ট অবহেলা- এমনটি মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।
সোমবার বিকেলে ঘটে যাওয়া বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি নিজের এ মত জানিয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় এক প্রাইভেটকারের পাঁচজন নিহত, দুইজন আহত হয়েছেন।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘ক্রেন থেকে গার্ডার কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে যেতেই পারে, সে কারণেই আপনাকে পূর্ব সতর্কতা নিতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস হচ্ছে, আমাকে কাজের জায়গায় আগেই নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। বেষ্টনীর মধ্যে যেন পথচারী বা কোনো যানবাহন ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।’
তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার সঠিকভাবে সব সাবধানতা মেনে কাজ করছে কি না, এটি তদারকির দায়িত্ব প্রশাসনের। সেটি করা হয় না বলেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবহেলা করে থাকে। যদি বেষ্টনী না থাকে, তাহলে এটা স্পষ্ট অবহেলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্পে কিন্তু এই ম্যানেজমেন্টের (নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা) জন্য বড় ব্যয় ধরা থাকে। আমার মনে হয়, বিআরটি প্রজেক্ট প্রথম থেকেই কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিসের ন্যূনতম যে গ্রামারটা আছে, সেটা ফলো করছে না। অতীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং নিহতের ঘটনাও আছে। সেখান থেকেও শিক্ষা নেওয়ার দরকার ছিল।’
জানা গেছে, বিআরটি প্রকল্পটি চীনের জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে।
হাদিউজ্জামান বলেন, ‘মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটা করছে, ভালো কথা। কিন্তু তারা ঠিকমতো প্র্যাকটিস করছে কি না, এর নজরদারি বা তদারকির দায়িত্ব তো বাস্তবায়নকারী সংস্থার। এ ধরনের প্রকল্পের সুপারভিশনের দায়িত্ব আরেক সংস্থার থাকে। তার মানে কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটার জন্য সুপারভিশন সংস্থা আছে, আমাদের বাস্তবায়নকারী সংস্থা আছে, এটার একটা সমন্বয় দরকার। আমি যেটা মনে করি, এটা বড় কাজ।’
ক্রেন উল্টে যাওয়া প্রসঙ্গে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘গার্ডারের যে ওজন এবং ক্রেনের যে সক্ষমতা, সেটা ঠিক আছে কি না, তা আগে দেখতে হবে। এই জিনিসটাও গুরুত্বপূর্ণ ক্রেন ঠিক আছে কি না। তার আগে দেখতে হবে ক্রেন যে অপারেট করছিল, তার লাইসেন্স আছে কি না। সে অভিজ্ঞ কি না, এটাও তদন্তের মাধ্যমে দেখতে হবে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উত্তরার রাস্তায় বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু প্রকল্পের জন্য কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখা যায়নি। খুব ঝুঁকিপূর্ণ দু-এক জায়গায় শুধু একটি লাল কাপড় দেওয়া হয়েছে মাঝেমধ্যে। এদিকে, দুর্ঘটনার পর উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীনও জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় সেখানে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না।
বিআরটি প্রকল্পে এমন দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে। জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৪ মার্চ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার লঞ্চার ভেঙে তিন চীনা কর্মীসহ ছয়জন আহত হন। এ বছরের ১৫ জুলাই গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় প্রকল্পটির এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। ওই ঘটনায় আরও আরেক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন।
সবশেষ ১৫ আগস্ট বিকালে একই প্রকল্পের একটি গার্ডার ক্রেন দিয়ে ট্রেইলারে তোলার সময় কাত হয়ে একটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। ওই প্রাইভেটকার থেকে পাঁচজনের মরদেহ এবং আহত অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করা হয়।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ জন প্রাণ হারান।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন