জিবিনিউজ24ডেস্ক//
ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা সাধারণ শিক্ষার্থীদের রুমে গিয়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও রুম থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার হুমকির একটি অডিও রেকর্ড সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে।
অডিও রেকর্ডটিতে কথা বলা ব্যক্তিটি যে তিনি তা স্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে বলতে শোনা যায়, ‘এইটুকু সেন্স থাকা উচিত ছিল, রুমটা যেহেতু ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্ট নিয়ে নিছে, ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্টের ওপরে আর কেউ নাই ৷ উল্টাপাল্টা করবি এক পায়ে পাড়া দেব, আরেক পায়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলব।’
অডিওতে রিভাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘তোরা লিগ্যাল তাতে আমার… গেছে। কোন হেডাম দেখাইতে আসিস তোরা। আমার পলিটিক্যাল রুমে তোরা লিগ্যাল থাকবি কি না, সেটা তোদের বিষয়। কে কে টাকা জমা দিছিস? আমারে দিছিস? আর কে লিগ্যাল?’
এ সময় পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘ও তো অসুস্থ, বাসায় গেছে।’ এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘২০২ (রুম নং) এ আর লিগ্যাল কে? তোরা লিগ্যাল তাতে আমার কী… গেছে? বল? আমি কি …… তোদের। চ্যাটাং চ্যাটাং করতাছোস! এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ধইরা ছিঁড়া ফেলমু। চার মাস হয়ে গেছে, ফাইজলামি শুরু করছিস!’
এ সময় সুমনা মীর নামে এক মেয়েকে গালমন্দ করতে শোনা যায় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতিকে। তিনি বলেন, ‘বুঝিস না, পলিটিক্যাল রুমে থাকিস? তোদের লিগ্যাল করাইছে তাতে আমার …. কী? আমি যদি একটা সিট না দেই, ২০২ থেকে তোদের কোন বাপ সিট দেবে? ম্যাডামেরা দেবে, ক্ষমতা আছে ম্যাডামদের? ম্যাডামদের ক্ষমতা আছে আমাদের রুম থেকে একটা মেয়েকে বের করার? ইডেন কলেজের প্রিন্সিপালেরও ক্ষমতা নেই এই রুম থেকে একটাকে বের করার ৷ একদম গলায় পাড়া দিয়ে ধরতে ইচ্ছা করতেছে ৷ আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে যেই রুমে বলব সেই রুমে যাবি ৷ আমার সঙ্গে হ্যাডাম দেখাইতে আসে ৷’
এসময় ইডেন কলেজ প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে কথা বলতে শোনা যায় তামান্না জেসমিনকে। তিনি বলেন, ‘একটা সিঙ্গেল মেয়ে যদি ওই রুমে এসে কন্ট্রোল করতে চাস, সে হোক নেত্রী, ইডেন কলেজের প্রিন্সিপাল ম্যামও কোনো মেয়ে দিতে পারবে না৷ এইটুকু সেন্স থাকা উচিত ছিল— রুমটা যেহেতু ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্ট নিয়ে নিছে, ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্টের ওপরে আর কেউ নাই ৷’
সূত্র জানায়, ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের নেত্রীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খুবই বাজে ব্যবহার করে। অনেক সময় হল থেকে বের করে দেয়। তবে ভয় কেউ মুখ খোলে না।
একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা কথা বললে সমস্যা হবে তাই কথা বলতে পারি না। তবে এবার আমরা সাহস দেখিয়েছি। বিষয়টি ম্যামদের নজরে এনেছি। তবে কাউকে রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়নি বলেও উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।
ফাঁস হওয়ার অডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, ‘এটা তেমন বড় কোনো বিষয় না। আমার কিছু জুনিয়র রুমে গেলে তাদের গালাগাল করে তারা ৷ পরে এ বিষয়ে কথা বলতে যাই। পলিটিক্স রুমে থাকলে প্রোগ্রাম করতে হবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়।’ তবে কয়েকটি ‘স্ল্যাং ল্যাঙ্গুয়েজ’ ব্যবহার করা হয়েছে বলে খেদ প্রকাশ করেন রিভা।
অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ নারগিস রুমা বলেন, ‘আমার কাছে তো রেকর্ড নেই। আমি এখন কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। তবে ২০২ নং রুম থেকে কয়েকজন ফোন দিয়েছে। আমি তাদের সরাসরি লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেছি।’
ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। হলের বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। আমি বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। এ রকম হওয়ার কথা না।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন