জিবিনিউজ24ডেস্ক//
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে শনিবার (২০ আগস্ট) রাতে ঢাকায় আসছেন কাতারের শ্রমমন্ত্রী আলী বিন সামিখ আল মাররি। তার এ সফরে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দেশটির শ্রমবাজার বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব পাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কাতারের শ্রমমন্ত্রীর এ সফরে শ্রমবাজার বাড়ানো ছাড়াও দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে জোর দেবে ঢাকা। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস জানান, শ্রমমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৬ষ্ঠ যৌথ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। কাতারের শ্রমমন্ত্রীর এ সফরে দেশটিতে লেবার ইস্যু গুরুত্ব পাবে। দেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার বাড়ানোর বিষয়েও আমরা আলোচনা করব।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কাতারে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য হাউস ভিসা চালু আছে। কিন্তু অন্য খাতে কর্মী নেওয়া বন্ধ রেখেছে দেশটি। আমাদের মন্ত্রী (প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী) কাতার সফর করেছেন। তার ফিরতি সফরে কাতারের শ্রমমন্ত্রী আসছেন। আমরা চাই তার এ সফরের মধ্য দিয়ে আরও বেশি কর্মীর দেশটিতে কর্মসংস্থান হোক।
জানা যায়, কাতারের শ্রমমন্ত্রী ঢাকা-দোহার ৬ষ্ঠ যৌথ কমিটির সভায় অংশ নেওয়া ছাড়াও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য হাউস ভিসা চালু থাকলেও বন্ধ রয়েছে কোম্পানি ও দোকানপাটের ভিসা। ২০১৭ সাল থেকে দেশটিতে শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ক্রমেই সংকুচিত হতে থাকে। এতে করে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা শ্রমিক সংকটে পড়ছেন। উপায় না পেয়ে তারা ভারত, নেপাল কিংবা পাকিস্তানি শ্রমিক নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ সামনে রেখে নিরাপত্তা, হসপিটালিটি ও ট্রান্সপোর্ট খাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়টি আলোচনা হলেও সেই অর্থে সুবিধা নিতে পারেনি ঢাকা। বিশ্বকাপ শুরু হতে হাতে যতটুকু সময় রয়েছে বাংলাদেশ আর সুবিধা নিতে পারবে বলেও মনে করেন না সংশ্লিষ্টরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কাতারের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। কাতারের শ্রমমন্ত্রী এলেই যে শ্রমবাজার খুলে যাবে এটা ভাবা ঠিক হবে না। কোনো সফর হলেই যে ওটার সুবিধা সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাবে, এটাও ভাবা ঠিক হবে না। ওনার সফরে যদি কিছু নাও হয়, সামনের দিনে আমরা সুবিধা পাব। আর শ্রমবাজার খোলার এখতিয়ার তাদের রাজার ওপর নির্ভর করছে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে কাতারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নির্মাণ খাতে কর্মী নিয়োগ শুরু হবে। তখন যদি আমরা সুবিধা নিতে পারি।
জানতে চাইলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওনার সঙ্গে আলাপ করার আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আমরা চাই, আরও বেশি বেশি কর্মী পাঠাতে। আরও চাই আমাদের কর্মীরা যেন দেশটিতে গিয়ে সব ধরনের নিরাপত্তা পায়।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে গত বছর (২০২১) পর্যন্ত কাতারে ৮ লাখ ১৩ হাজার ৭১৬ জন বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৬৫ জন বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হয় দেশটিতে। ২০১৬ সালে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৮২ জন, ২০১৭ সালে ৮২ হাজার ১২ জন, ২০১৮ সালে ৭৬ হাজার ৫৬০ জন, ২০১৯ সালে ৫০ হাজার ২৯২ জন, ২০২০ সালে ৩ হাজার ৬০৮ জন এবং গত বছর ২১ সালে ২ হাজার ১৮ জন কর্মীর কর্মসংস্থান হয় কাতারে।
এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ৫০ হাজারের বেশি কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন।
চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝিতে কাতার সফর করেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। সে সময় তিনি কাতারে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ নিয়ে দেশটির শ্রমমন্ত্রী আলী বিন সামিখ আল মাররির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে বিশ্বকাপ ২০২২ আয়োজনে নিরাপত্তা, হসপিটালিটি ও ট্রান্সপোর্ট খাতে বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ, বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে নির্মাণ ও সেবা খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন