জিবিনিউজ24ডেস্ক//
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগসহ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে সাতটি সুপারিশ করেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো। সোমবার (২২ আগস্ট) ইসির যুগ্ম-সচিব এসএম আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এসব সুপারিশ করেছে সংস্থাগুলো। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১। ভোট দান প্রক্রিয়া
ইভিএম বিষয়ে সাহায্যের জন্য প্রতি বুথে একজন করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্কাউট, গার্লস গাইড, বিএনএসসিসি, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
২। নিরাপত্তা ব্যবস্থা
(ক) সকল নির্বাচনে আশঙ্কাযুক্ত এলাকাসমূহে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে।
(খ) প্রতি নির্বাচনী এলাকার জন্য সেনা/র্যাবের মোবাইল টিমের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
(গ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে অবশ্যই সব এলাকাতে নির্বাচন দিনের কমপক্ষে সাত দিন পূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এমনকি প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে।
৩। আচরণবিধি
(ক) প্রার্থী, রাজনৈতিক দল, দলীয় প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী ও এমপি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সরকারি গাড়ি, সার্কিট হাউজ, প্রচারমাধ্যম, সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছেন— তা বন্ধ করতে নির্বাচনী বিধিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
(খ) নির্বাচন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারী ও সংস্থাকে ব্যাপক জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা।
৪। ভোট গণনা
(ক) স্বচ্ছতার জন্য ভোট গণনার সময় প্রার্থীদের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
৫। ভোটকেন্দ্রের উপকরণ
(ক) সব বুথে আলোর ব্যবস্থা করা এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বসার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা উচিত।
(খ) ভোটারদের হাতের আঙ্গুল লেপনকারী অমোচনীয় কালি আরও উন্নতমানের হওয়া উচিত।
৬। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষক
(ক) পর্যবেক্ষকদের জন্য নির্বাচনী ফ্যাক্টশিট ও গণনা শেষে রেজাল্ট সরবরাহ করা প্রয়োজন।
(খ) স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা তথা সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ প্রতিবেদন প্রদানের জন্য প্রতি কেন্দ্রে কমপক্ষে একজন পর্যবেক্ষক সার্বক্ষণিক অবস্থানের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন।
(গ) কমিশন প্রদেয় পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ফরম (ই ও-৪)— কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ দিয়ে শৌচাগার, পানি সমস্যা, ভোটদান প্রক্রিয়া, ভোট কাস্টিং, রেটিং, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আচরণ, যথার্থ নিয়মে ভোট গণনা, পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা, প্রার্থী ও প্রার্থীদের পক্ষের লোকজনের ভূমিকা, বিজয়ী পক্ষের সমর্থকদের ও বিজিত পক্ষের সমর্থকদের আচরণের চিত্র তুলে ধরার জন্য ছক সম্বলিত ফরম করলে ভালো হবে।
৭. নির্বাচন ও ভোট প্রদানে করণীয়
(ক) ভোটার শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করা; এক্ষেত্রে সরকারি- বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা যেতে পারে। গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে মোট সাতটি স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার ৯২ জনকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। তারা মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রসহ সার্বিক নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। সংস্থাগুলো হলো জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ-জানিপপ, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন, রিহাফ ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস এবং মানবাধিকার ও সমাজনউন্নয়ন সংস্থা-মওসুস।
এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিটি কেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ভোটারদের মাঝে স্বস্তি লক্ষ করা গেছে। নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন ব্যক্তিদের কেন্দ্রের আশেপাশে ভিড়তে দেখা যায়নি। এ নির্বাচনে ইভিএম সম্পর্কিত কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বয়স্ক ও ইভিএম সম্পর্কে অনভিজ্ঞদের ভোট প্রদানে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লেগেছে।
সংস্থাগুলো তাদের প্রতিবেদনে জানায়, পর্যবেক্ষণকৃত ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। ভোটের দিন ভোটাররা অবাধে ভোটকেন্দ্রে যাতায়াত করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দৃশ্যমান ছিল। ভোট গণনা কক্ষে একের অধিক প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। সব কেন্দ্রের ভোট গণনার বিবরণী কেন্দ্রের নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং ভোট গণনার বিবরণী কপি কেন্দ্রেই এজেন্টকে সরবরাহ করা হয়েছিল।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেন্দ্রগুলোতে কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত গণমাধ্যমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদেরকে ভোট গণনার সময়ে নিরপেক্ষভাবে ভোট গণনা করতে দেখা গেছে।
নির্বাচনটি দুই/একটি ছোট-খাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সম্পূর্ণ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল আর শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যেই শেষ হয়েছে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পূর্ণ ইভিএমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভোট সমাপ্তির পর যথাযথ নিয়মেই ফল প্রস্তুত ও ঘোষণার কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর সুশৃঙ্খল চিত্র কিছুটা পাল্টে যায়। লোডশেডিংয়ের কারণে চলে যায় বিদ্যুৎ, নির্বাচনী ফল ঘোষণাস্থলে বেধে যায় হট্টগোল, পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এতে কেন্দ্রভিত্তিক ফল ঘোষণায় কিছুটা অসুবিধা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই সব কেন্দ্রের ফল সঠিকভাবে ঘোষণা করা সম্ভব হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন