মজুরির দাবিতে প্রতিবাদ করায় শ্রমিকদের ফেরত পাঠাচ্ছে কাতার

gbn

 জিবিনিউজ24ডেস্ক//

অপরিশোধিত মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করায় অভিবাসী শ্রমিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। আগামী নভেম্বরে দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতির আগে মজুরি পরিশোধ না করে শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, প্রায় ৭ মাস ধরে মজুরি পাচ্ছেন না অভিযোগ করে গত ১৪ আগস্ট দেশটির নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আল বান্দারি ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের দোহা অফিসের বাইরে জড়ো হন শ্রমিকরা। প্রায় ৬০ জন শ্রমিক তাদের অপরিশোধিত মজুরির দাবিতে সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

পরে এই বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে আটক করে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এবং কয়েকজনকে ইতোমধ্যে নিজ দেশে ফেরতও পাঠানো হয়েছে। তবে কতজন অভিবাসী শ্রমিককে কাতার ফেরত পাঠিয়েছে তা জানা যায়নি।

দেশটির সরকার বলেছে, যারা কাতারের নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করেছেন, কেবল তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

২০১০ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কাতারজুড়ে ফুটবল স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। তখন থেকেই এসব নির্মাণ স্থাপনায় নিয়োজিত শ্রমিকদের প্রতি কর্তৃপক্ষের আচরণ নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে।

বিশ্বকাপের আয়োজন ঘিরে দেশটিতে চলমান নির্মাণযজ্ঞে বেশিরভাগ কাজ করছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ এবং প্রকৌশল কোম্পানি আল বান্দারি ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ।

যেসব শ্রমিককে আটক এবং ফেরত পাঠানো হয়েছে, তারা বিশ্বকাপ আয়োজনের নির্মাণকাজে নিয়োজিত ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। বিশ্বকাপের আয়োজক কমিটিও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে কাতার সরকার দোহায় অনুষ্ঠিত বিরল বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অংশ নেওয়া কয়েকজন অভিবাসী শ্রমিককে আটকের তথ্য নিশ্চিত করেছে। দেশটির সরকার বলছে, দোহায় বিক্ষোভ আয়োজনের মাধ্যমে এই শ্রমিকরা কাতারের জননিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করেছেন।

সরকারের এই বিবৃতিতে যে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ থাকতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা বাধ্যতামূলক ফেরতের সম্মুখীন হয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, এই শ্রমিকদের কয়েকজন ইতোমধ্যে দেশটি ত্যাগ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিলম্বিত বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কাতার।

দেশটির সরকার বলেছে, শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ না করায় ইতোমধ্যে আল বান্দারি গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়া সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এই কোম্পানির বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শ্রমিক অধিকার বিষয়ক বিশেষায়িত মানবাধিকার সংস্থা ইকুইডেম শ্রমিকদের এই বিষয়টি তুলে ধরেছে। সংস্থাটির প্রধান মুস্তফা কাদরি বিবিসিকে বলেছেন, আমরা কি কাতার এবং ফিফার কাছে প্রতারিত হচ্ছি?

‘তারা আমাদের বলেছে, কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়ে নৈতিক কোনও সঙ্কট নেই। কিন্তু এমন একটি দেশে বিশ্বকাপের আয়োজন করা হচ্ছে, যারা এখনও মনের কথা বলার জন্য মানুষকে শাস্তি দেয়।’ 

কাদরির তথ্য অনুযায়ী, দোহায় আল বান্দারি গ্রুপের কার্যালয়ের সামনে যে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছিলেন, তারা বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিসর এবং ফিলিপাইনের নাগরিক।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন কাদরি। তারা তাকে বলেছেন, ‘কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের বলেছেন যে, তারা যদি গরম আবহাওয়ায় বিক্ষোভ করতে পারেন, তাহলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ঘুমাতে পারবেন।’

‘আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে, শ্রমিকরা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মাঝেও প্রতিবাদ করার জন্য কতটা মরিয়া ছিলেন? তারা রাজনৈতিক কর্মী নন, তারা কেবল শ্রমের বিনিময়ে বেতন পেতে চান,’ বলেন কাদরি।

বিবিসি আরবির চলতি বছরের শুরুর দিকের এক প্রতিবেদনে হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়া অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা কাতার সঠিকভাবে গণনা করছে না বলে জানানো হয়।

এই বছরের শুরুতে কাতারে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ শিকার অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কমপক্ষে ৪৪০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন