অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা মহাত্মা গান্ধী নিজেই প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ভারতের স্বাধীনতার পর তিনি আর আনুষ্ঠানিক রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। বরং রাজনীতি থেকেই তিনি অবসর গ্রহন করেছিলেন। ওই অবস্থায় ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নাথুরাম গডসে নামে এক ব্যক্তি তাকে গুলি করে হত্যা করেন।
তিনি বলেন, তাঁর মহান দর্শন ও কর্মময় জীবন স্থান-কালের সীমানা ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তার দর্শন বিভিন্ন দেশ ও জাতিকে দেখিয়েছে আলোর পথ। জুনিয়র মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা, দলাইলামা থেকে শুরু করে অং সান সু চি'র মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতির গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও অধিকার কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছে গান্ধীর মহান দর্শন।
শুক্রবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস কাউন্সিল মিলনায়তনে অহিংস রাজনীতির প্রবক্তা মহাত্মা মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর ১৫১তম জন্মবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের উপদেষ্টা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি- জেপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সাদেক সিদ্দিকী।
প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম.এ জলিল, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের সভাপতি লায়ন গনি মিয়া বাবুল, জয় বাংলা মঞ্চের সভাপতি মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ নেতা আ.স.ম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ জাসদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির, বরিশাল বিভাগ সমিতির মো. শহীদুননবী ডাবলু, নারী নেত্রী মরিয়ম প্রমুখ।
তিনি বলেন, আজ সারাবিশ্বে সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে, জাতিতে-জাতিতে যে বিদ্বেষ, হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস বাণী প্রেরনা যোগায়। হিংসা দিয়ে পৃথিবীতে কখনই কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। আর বাংলাদেশের মানুষ সকল সময়ই শান্তিপ্রিয়। তারা সকল সময় শান্তির জন্য কাজ করে। বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে মিলনের কথা বলে। একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম সে সে লক্ষ্যে অবিচল। সংঘাতমুক্ত সমাজ, সংঘাতমুক্ত পৃথিবী, যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব গঠনে মহাত্মা গান্ধীর দর্শন অত্যন্ত মানুষকে অনুপ্রানীত করে। সামরিক অস্ত্রের বিপরীতে অহিংস অস্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ন্যাপ মহাসচিব বলেন, একটি গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ যুদ্ধ করেছিলেন, নিজের রক্ত দিয়েছিলেন। এমন একটি দেশ তারা চেয়েছিলেন যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কিন্তু, তাদের সে আকাঙ্খা এখনও অধরা রয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে চারদিকে রাজনীতি, ধর্মসহ বিভিন্ন কারণে হানাহানি, দ্বন্দ্ব আর সহিংসতা চলছে। যেখানে সহিংসতা রয়েছে, সেখানে ইতিবাচক কিছু ঘটে না। সহিংসতা শুধু ধ্বংস করে, সৃষ্টি করে না। সহিংসতা, দ্বন্দ্ব, হানাহানি জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই আমাদের এগিয়ে যেতে হলে এই দ্বন্দ্ব- হানাহানির অবসান ঘটাতে হবে, গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত, ন্যায় বিচার ভিত্তিক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণভাবে ত্রুটিমুক্ত ও পরিশুদ্ধ করা আজ সময়ের দাবী। গুম, খুন, অপহরণসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য।
তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধী সারাজীবন হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। গান্ধীর জন্মদিনে আমাদের হিংসা, অশান্তি ও সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা গ্রহন করা প্রয়োজন। তাহলে মহাত্মা গান্ধির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন সম্ভব হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন