বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমাকে সিরিয়ায় পাচার করেন কানাডীয় গুপ্তচর

জিবিনিউজ24ডেস্ক//

ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমকে কানাডার নিরাপত্তা সংস্থার এক গুপ্তচর সিরিয়ায় পাচার করেছিল।

বিবিসি এমন কিছু নথি দেখেছে, যাতে এই গুপ্তচর দাবি করেছেন, তিনি শামীমা বেগমের পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য কানাডাকে জানিয়েছিলেন এবং অন্যান্য ব্রিটিশ নাগরিককে ইসলামিক স্টেটের হয়ে লড়াই করার জন্য পাচার করেছেন।

ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়ার জন্য সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিল। তার আইনজীবীরা ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, শামীমা বেগম পাচারের শিকার হয়েছিলেন।

কানাডা এবং যুক্তরাজ্য সরকার এই বিষয়টি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বলে এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

পূর্ব লন্ডনের তিন স্কুল ছাত্রী শামীমা বেগম, খাদিজা সুলতানা এবং আমিরা আবাসি ২০১৫ সালে সিরিয়ায় পালিয়ে যান ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার জন্য। সেসময় শামীমা বেগমের বয়স ছিল ১৫ বছর। অপর দুজনের বয়সও ছিল যথাক্রমে ১৬ এবং ১৫।

ইস্তাম্বুলের প্রধান বাস স্টেশনে তাদের সঙ্গে মোহাম্মদ আল রশিদ নামে এক ব্যক্তির দেখা হয়, যিনি তাদের সিরিয়ার ইসলামিক স্টেট নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যেতে সাহায্য করেন।

মোহাম্মদ আল রশিদ যখন এভাবে সিরিয়ায় লোকজনকে পাচার করছিলেন, তখন তিনি কানাডার একটি নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য পাঠাতেন। বিবিসির কাছে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একজন ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা গোয়েন্দা কর্মকর্তা, যিনি ইসলামিক স্টেটকে দমনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক জোটের অন্তর্ভুক্ত এক সংস্থায় কাজ করেন।

বিবিসি মোহাম্মদ আল রশিদের ওপর একটি নথি সংগ্রহ করেছে, যাতে তার ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংগৃহীত তথ্যই শুধু নয়, তার কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ থেকে সংগৃহীত তথ্যও রয়েছে। কীভাবে তিনি কাজ করতেন, তার বিশদ একটা ধারণা পাওয়া যায় এসব তথ্য থেকে।

মোহাম্মদ আল রশিদ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, তিনি যাদের সিরিয়ায় পাচার করতে সাহায্য করতেন, তাদের তথ্য আবার জর্ডানে কানাডার দূতাবাসের হাতে তুলে দিতেন।

শামীমা বেগমকে সিরিয়ায় পাচারের কয়েকদিনের মধ্যেই তুরস্কে মোহাম্মদ আল রশিদকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি তুরস্কের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, শামীমা বেগম যে পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভ্রমণ করছিলেন, তিনি সেটির একটি ছবি শেয়ার করেছেন।

লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ যখন শামীমা বেগমের সন্ধান করছিল, ততদিনে কানাডার নিরাপত্তা সংস্থার হাতে শামীমা বেগমের পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য চলে গেছে। তবে শামীমা বেগমও ততদিনে সিরিয়ায় পৌঁছে গেছেন।

এই নথি থেকে দেখা যায়, শামীমা বেগমকে সিরিয়ায় পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল ইসলামিক স্টেটের পাচার নেটওয়ার্কের একটি বড় অংশ। এটি নিয়ন্ত্রিত হতো ইসলামিক স্টেটের রাজধানী বলে কথিত রাকা থেকে।

মোহাম্মদ আল রশিদ ছিলেন এই নেটওয়ার্কের তুরস্কের দিকের অংশের সঙ্গে যুক্ত। শামীমা বেগম এবং তার দুই বান্ধবীকে সাহায্য করার আট মাস আগে থেকেই তিনি ব্রিটিশ নারী-পুরুষ-শিশুদের সিরিয়ায় পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বিবিসি সম্প্রচার করতে যাচ্ছে এমন একটি পডকাস্ট ‌আই এম নট এ মনস্টারে কথা বলেছেন শামীমা বেগম। সেখানে তিনি বলেছেন, মোহাম্মদ আল রশিদ তুরস্ক হতে সিরিয়া পর্যন্ত যাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করে দিয়েছিল... আমার মনে হয় না পাচারকারীদের সাহায্য ছাড়া কারও পক্ষে সিরিয়ায় যাওয়া সম্ভব ছিল। তিনি আরও বহু মানুষকে আসতে সাহায্য করেন... তিনি আমাদের যা যা করতে বলেছিলেন, আমরা তাই করছিলাম। কারণ তিনি সব জানতেন, আমরা তো কিছু্ই জানতাম না।

মোহাম্মদ আল রশিদ যাদের সাহায্য করেছিলেন, তাদের সব তথ্য তিনি সংরক্ষণ করতেন। তাদের পরিচয়পত্রের ছবি তুলে রাখতেন, অনেক সময় গোপনে ফোনে তাদের ভিডিও রেকর্ড করতেন। একটি রেকর্ডিংয়ে দেখা যায়, শামীমা বেগম এবং তার বান্ধবীরা সিরিয়ার সীমান্তের কাছে একটি ট্যাক্সি থেকে বের হচ্ছেন, এরপর অপেক্ষমান গাড়িতে উঠছেন।

মোহাম্মদ আল রশিদ ইসলামিক স্টেট সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করতেন। সিরিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো থেকে যেসব যোদ্ধা গিয়েছিল, তারা যেসব বাড়িতে থাকতো ম্যাপে সেগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করতেন। এছাড়া ইন্টারনেটের আইপি অ্যাড্রেস এবং আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যেসব ইন্টারনেট ক্যাফে আছে, সেগুলো খুঁজে বের করতেন। আইএস যোদ্ধাদের সঙ্গে তার যে কথা চালাচালি হতো, সেগুলোরও স্ক্রিনশট তুলে রাখতেন।

একটি রেকর্ডে দেখা যায়, মোহাম্মদ আল রশিদ এমন একজনের সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি এক কুখ্যাত ব্রিটিশ আইএস যোদ্ধা রাফায়েল হোস্টে, যে তাকে বলেছিল, আমি চাই তুমি আমাদের সঙ্গে কাজ করো। আমি চাই তুমি আমাদের হয়ে লোকজনকে এখানে আনতে সাহায্য করো।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন