বাংলাদেশ  ফ্রেন্ডলিস্টের লড়াইয়ে

gbn

বিশেষ প্রতিনিধিঃবাংলাদেশের তিস্তা নদী নিয়ে চীনের চিকন খেলা রুখতে উঠেপড়ে নেমেছে ভারত। অ্যাকচুয়ালে যা-ই হোক, ভার্চুয়ালে জানিয়েছে, তিস্তা চুক্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র। ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শেষ হওয়া ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শক কমিশনÑজেসিসির ঘণ্টাব্যাপী ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে খবরটির জানান দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ঢাকাকে প্রায় এ ধরনের আশ্বাস এর আগেও দেওয়া হয়েছে দিল্লির পক্ষ থেকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই সুযোগটা নিয়েছে চীন। বাংলাদেশের মানুষের সেন্টিমেন্টদৃষ্টে তিস্তা নিয়ে তারা খেলেছে জুতসই খেলা। তিস্তা নদী খননের চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের নৈকট্য নিয়েছে। করোনার পর চীন মাস্ক ও গাউনসহ অনেক সরবরাহ পাঠিয়েছে। মেডিকেল পরামর্শক টিমও এসেছে। উপরন্তু ব্যক্তিগতভাবে দখলকৃত চীনা কোম্পানি সিনোভাক বায়োটেক দ্বারা তৈরি একটি ভ্যাকসিনের ফেজের থার্ড ট্রায়াল চলছে। একদিকে চীনের সস্তা কাঁচামালের অভাবে ভারতের অনেক শিল্পপতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থায়, অন্যদিকে বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নিয়েছে চীন। সিলেটে ভারতের সীমান্তবর্তী জায়গায় এয়ারপোর্ট টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি করেছে। তিস্তায় করে দিচ্ছে বাজিমাত।  ব্যবসার কথা বলা হলেও ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশে চীনের কূটনৈতিক প্রভাব মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া ভারতকে ভাবিয়ে তুলেছে। দৃশ্যত বাণিজ্য ও অবকাঠামো বিনিয়োগ দেখা গেলেও বাংলাদেশে চীনের চিকন কূটনীতি কাবু করে ফেলেছে ভারতকে। বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও এভাবে বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়বে, দিল্লি তা ভাবেনি। বাংলাদেশকে ঘিরে ঘাবড়ে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে চীনের জন্যও। সেটার নেপথ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রহস্যঘেরা কূটনীতি। তারা দাবার গুটির মতো চাল দিয়ে বাংলাদেশকে চীন থেকে দূরে রাখতে চায়। বাংলাদেশকে চীনের সঙ্গ ছাড়ানোর নেপথ্য উদ্দেশ্যে সৌদি আরবকেও সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরবে ৪০ বছর ধরে অবস্থানরত প্রায় ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি সিল দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ধুম তোলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের চাবিকাঠি কূটনৈতিক মহলে বেশ আলোচিত। ঢাকাকে ওয়াশিংটনের ‘উদীয়মান উড়ন্ত’ মিত্র বানানোর ঘেরাটোপ বিফলে যাচ্ছে না। বাংলাদেশ বাহ্যত কাউকে ‘না’ করছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব মার্ক এসপারের বিশেষ টেলিফোন কলে ওই ধরনের কিছু মত ও ভাব বিনিময় হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিকে ২০৩০ সালের মধ্যে সেনাবলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বলীয়ান করে দেওয়ার কমিটমেন্ট দিয়েছেন মার্ক এসপার, যা মূলত ওয়াশিংটনের বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ। চীন-ভারত উভয়ের জন্য এটি উদ্বেগের হলেও আপাতত ভারত নির্ভার থাকতে চাচ্ছে এ প্রশ্নে। কারণ বাংলাদেশ মার্কিন ব্লকে গেলে নগদে ভারতের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে চীন। এর বিপরীতে অ্যাকশনে কম যাচ্ছে না চীনও। অব্যাহত উসকানি দিচ্ছে মিয়ানমারকে। বাংলাদেশ সীমান্তের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৪টি অত্যাধুনিক ট্যাংক জড়ো করেছে মিয়ানমার। সাথে রয়েছে অন্যান্য ভারী অস্ত্রও। মিয়ানমারে থাকা আরও সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর দামামা বাজাচ্ছে। প্রাচুর্য থাকার পরও অগণিত মানুষকে অসহায় রেখে বশ মানানোর থিওরিতে ফেলা হচ্ছে বাংলাদেশকে। করোনা মহামারির বৈশ্বিক তোলপাড়ে তা এগিয়েছে আরো অনেক দূর। বিশ্বজুড়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় আগুয়ানরা এরই মধ্যে এই ছকে টেনে নিয়েছে বাংলাদেশকে। শত অসন্তোষেও তারা ক্ষমতাসীনদের নিশ্চয়তা দিচ্ছে ক্ষমতার যাবতীয় নিরাপত্তার। নানান সুতার প্যাঁচে তারা বাংলাদেশকে ভারতমুখী করছে। আবার তাদের একটি অংশই চীনের সঙ্গ না ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশকে। সাম্প্রতিক সময়ে যখন যে ইস্যু আসে সেটাতেই বাংলাদেশের হিতাকাক্সক্ষী কেবল বাড়ছেই। পারলে নেপাল-ভুটানও এ খেলায় শরিক হয়। এরই মধ্যে পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশে সওদাগরি খেলায় নেমেছে তুরস্ক। তারা বাংলাদেশের মানুষকে ২৩ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ খাওয়াতে চায়। বাংলাদেশের বিপদ-আপদের বন্ধু হতে আধুনিক সমরাস্ত্র জোগানও দিতে চায়। চীন-যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে আসছে। আরো দিতে চায়। কূটনীতিকরা বলছেন, এসব দান বা হিসাব আসলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানকেন্দ্রিক। অল্প সময়ে ভারত মহাসাগরে পা ভেজাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড চীনের কাছে সোনার চেয়েও দামি। অন্যদের কাছেও নিউরো-ইকোনমিকস বা স্নায়বিক অর্থনীতি নামে নতুন একটি বিষয় যোগ হয়েছে বাংলাদেশকে ঘিরে। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের দেশে দেশে বাণিজ্য ও ভূরাজনীতির ঢেউ বাংলাদেশের মতো ছোট দেশকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তাই বাংলাদেশকে ফ্রেন্ডলিস্টে নেওয়ার লড়াইয়ে নেমেছে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন