জিবিনিউজ24ডেস্ক//
চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে উজবেকিস্তানের সমরখন্দে শুরু হচ্ছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের ২২ তম সম্মেলন। সম্মেলনের সময় ঐতিহাসিক এই শহরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ এক ছাদের নিচে বসবেন ১৩ জন আঞ্চলিক নেতা।
তবে এই সম্মেলন চলাকালীন মোদির ও শেহবাজের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কোনো বৈঠক চায় না পাকিস্তান। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
আগামী ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের সমরখন্দ শহরে বিশ্বের বৃহত্তম আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সাংহাই কো অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ভারত ও পাকিস্তান উভয়য়েই এসসিওর সদস্য এবং নিজ নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ও শেহবাজ শরিফ— দুজনেরই সে সম্মেলনে উপস্থিত থাকা অনেকটা নিশ্চিত।
গত আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও টিভি জানিয়েছিল, সমরখন্দে এসসিওর সম্মেলনেই পাকিস্তান ও ভারতের সরকার প্রধানের সরাসরি সাক্ষাৎ হবে। ভারত ও পাকিস্তান ছাড়া সাংহাই কো অপারেশন অর্গানাইজেশনের অন্য প্রভাবশালী সদস্যরাষ্ট্রগুলো হলো- রাশিয়া ও চীন।
এই তিন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর। তবে নরেন্দ্র মোদি ও শেহবাজ শরিফের আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ ঘটলেও তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
মূলত ভারতশাসিত কাশ্মিরের জনগণ এবং ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি ভারত সরকারের বর্বর ও অমানবিক আচরণের কারণে পাকিস্তান এই অবস্থান নিয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে বৈঠকে বসার আবেদন জানানো হলে তাতে সাড়া দিতে পারে পাকিস্তান।
রোববার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বেশ কয়েকটি উচ্চপদস্থ সূত্র দ্য নিউজকে জানিয়েছেন, ‘নয়াদিল্লি একটি কাঠামোগত বৈঠকের জন্য অনুরোধ করলে ইসলামাবাদ ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করতে পারে।’
সাংহাই কো অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনের করিডোরে যেকোনো দুই নেতার বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেও সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে বৈঠকের চূড়ান্ত সময়সূচি সম্পর্কে ব্রিফ করবে।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো বৈঠক হতে চলেছে। করোনাভাইরাস মহামারির পর থেকে প্রথমবারের মতো বিদেশে যাচ্ছেন এই চীনা নেতা, আর এ কারণেই শেহবাজ-জিনপিং বৈঠকটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্য নিউজ বলছে, সমরখন্দের প্রাচীন উজবেক সিল্ক রোড নগরীতে শেহবাজ-জিনপিং সাইডলাইন বৈঠকের একটি সুস্পষ্ট তাৎপর্য রয়েছে। কারণ দুই দেশের আলোচনার জন্য চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) আরও এগিয়ে নেওয়া এবং চীনের অত্যধিক প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার মতো বিষয়টি বৈঠকের এজেন্ডায় রয়েছে।
এছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এসসিওর সাইডলাইনে শেহবাজের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং সেখানে শি জিনপিংয়ের সাথে একটি বৈঠকের পরিকল্পনাও করেছেন তিনি।
তবে শেহবাজ-মোদির বৈঠকের বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
সাংহাই কো অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়ে রোববার ভারত সরকার যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে শেহবাজ শরিফ, শি জিনপিং বা পুতিনের সঙ্গে মোদি কোনো দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন কিনা তা বলা হয়নি। চীনের মতো ভারতও ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের নিন্দা করতে অস্বীকার করেছে এবং রাশিয়ার তেল কেনা বাড়িয়েছে (নয়াদিল্লি)।
এছাড়া ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্তে ভারতীয় অধিকৃত এলাকায় সংঘর্ষের পর থেকে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং মোদি ২০১৯ সাল থেকে দ্বিপাক্ষিক কোনো আলোচনা করেননি।
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর সমরখন্দে ভারত ও পাকিস্তান ছাড়াও চীন, রাশিয়া, মধ্য এশিয়ার কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানের সমন্বয়ে গঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন