চীনকে ‘বিশেষ’ ভূমিকায় চায় বাংলাদেশ

 জিবিনিউজ24ডেস্ক//

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে স্থানীয়দের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মিয়ানমারে চীনের যে প্রভাব রয়েছে, সেটি কাজে লাগিয়ে দেশটিকে বিশেষ ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেছে ঢাকা। ঢাকার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বেইজিংয়ে বিশেষ বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চীনা দূত।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের স‌ঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে বেশিরভাগ সময়জুড়েই আলোচনা হয় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে।

 

বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এটি নিরাপত্তা ইস্যুর জন্য ভালো হবে না। রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে বেইজিংয়ের যে প্রভাব রয়েছে, সেটি অন্যদের সেই অর্থে নেই। নেপিদোতে বেইজিংয়ের যে যোগাযোগ চ্যানেল রয়েছে, সেটি কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়ে দেশটিকে বিশেষ ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেছে ঢাকা। এক্ষেত্রে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তিনি বেইজিংয়ে একটি বিশেষ বার্তা দেবেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ কারণে বার বার যে ভায়োলেন্স হচ্ছে, সেটি চীনের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, কোনো সম্পৃক্ততা না থাকার পরও আমাদের লোকেদের ওপর প্রভাব পড়ছে। মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বলি তারা কেন হবে? তারা প্রতিনিয়ত শঙ্কায় রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না করা গেলে উদ্বেগ থেকে যাবে। সেজন্য চীন যেন এ ব্যাপারে তাদের প্রভাব কাজে লাগায় সে অনুরোধ করা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বার বার বলেছেন, এগুলো দুর্ভাগ্যজনক। তিনি এ ব্যাপারে বেইজিংয়ে বিশেষ বার্তা পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

dhakapost

মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, সীমান্ত পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে চীন যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ নিয়েছে, সেটির চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা দরকার। তারা তাদের পাইলট প্রজেক্টের কথা বলেছেন। তখন আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের মূল জায়গা ঠিক করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিকে একটা স্টেবল অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা দরকার।

 

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূতকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব জানান, মিয়ানমার বলছে বাংলাদেশের ভেতরে আরাকান আর্মি আছে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো মিল নেই। আমরা এ ধরনের সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেই না। রাষ্ট্রদূত জানতে চান, বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টারশেল পড়াসহ অন্যান্য যে ঘটনা ঘটেছে, এটা ইচ্ছাকৃত না ভুলক্রমে এসেছে। জবাবে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, বাংলাদেশ এ বিতর্কে যেতে চায় না। বাংলাদেশের চায় সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকুক এবং মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের কারণে যেন এখানকার জনগণের ওপর প্রভাব না পড়ে।

বৈঠকে রাষ্ট্রদূত চীন-মিয়ানমার সীমান্তে ইউনান প্রদেশের মধ্যে মিয়ানমারের গোলাবর্ষণের উদাহরণ দেন। এ‌ক্ষে‌ত্রে চীনে ছোড়া গোলাগুলো অনিচ্ছাকৃত ছিল বলে অ‌নেকটা মিয়ানমা‌রের প‌ক্ষে কৌশ‌লে সাফাই গান রাষ্ট্রদূত।

সূত্রে জানা যায়, অন্য দূতদের সঙ্গে আসিয়ান জোটের বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়ার কারণ হিসেবে চীনা রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তাদের সমস্যা ছিল। চীনা দিবস নিয়ে কর্মকর্তারা ব্যস্ত ছিলেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাতের জেরে বাংলাদেশ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেগুলো জানাতে গত সোমবার প্রথম দফায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আসিয়ান জোটের দূতদের ডাকা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সেই ব্রিফিংয়ে ঢাকায় মিশন না থাকায় লাওস ও কম্বোডিয়া বাদ ছিল। বাদ ছিল মিয়ানমারও। বাকি সাত দেশের কূটনীতিকেরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আসিয়ানের সহযোগিতা চায় ঢাকা।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন