জিবিনিউজ 24 ডেস্ক //
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেরে উঠতে সময় নেন, তাহলে ৩রা নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কি হবে? নির্বাচন কি পিছিয়ে দেয়া যাবে? কে বা কারা এ পরিবর্তন করতে পারেন?
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন প্রেসিডেন্ট নিজে করতে পারবেন না। সেটা করতে পারেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিতে হলে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে এ প্রস্তাবটিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে। বিশ্লেষকরা বলেন, এমন সম্ভাবনা কম, কারণ নিম্নকক্ষ অর্থাৎ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে ডেমোক্র্যাটদের।
তারিখ পিছিয়ে দিলে আরো অনেক কিছু ঘটতে পারে
ধরা যাক কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যরা নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেবার পক্ষে ভোট দিলেন। কিন্তু মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্টে প্রশাসনের আয়ু হচ্ছে ঠিক চার বছর।
তাই সংবিধান মোতাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ আপনা আপনি শেষ হয়ে যাবে ২০২১ সালের ২০শে জানুয়ারি দুপুর বেলা। তাই নির্বাচনের তারিখ পাল্টালে সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে।
আর তা করা যাবে তখনই, যখন দু-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা, বা রাজ্য পর্যায়ের আইনসভা এবং তার পর যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর তিন-চতুর্থাংশ তা অনুমোদন করবে। তাই বলা যেতে পারে, এরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা কম।
প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে কি হবে?
প্রেসিডেন্ট যদি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না - তাহলে মার্কিন সংবিধান ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট সুস্থ হলে তিনি আবার তার পদে ফেরত আসবেন।
প্রেসিডেন্ট যদি ক্ষমতা হস্তান্তর করার মতো সুস্থও না হন - তাহলে তার মন্ত্রিসভা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁকে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ ঘোষণা করতে পারে, এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট তখন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা নিতে পারেন।
এরপর যদি ভাইস প্রেসিডেন্টও দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে প্রেসিডেনশিয়াল সাকসেশন এ্যাক্ট নামে আইন অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার এ দায়িত্ব নেবেন।
অবশ্য বর্তমানে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি যেহেতু একজন ডেমোক্র্যাট তাই সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরকম কোনো পরিস্থিতি হলে তা আইনী লড়াইয়ের জন্ম দিতে পারে।
এরপর স্পিকারও যদি দায়িত্ব না নেন - তাহলে একজন সিনিয়র রিপাবলিকান নেতা - বর্তমান পরিস্থিতিতে ৮৭ বছর বয়স্কত চার্লস ই গ্রাসলি - প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে পারেন। অবশ্য এটাও আইনি লড়াইয়ের জন্ম দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্ট কি আগে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়েছিলেন?
১৯৮৫ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যান ক্যা্ন্সারের অস্ত্রোপচারের জন্য যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ হার্বার্ট বুশ। এরপর ২০০২ এবং ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে কলোনোস্কোপি করার জন্য সংজ্ঞাহীন করা হয়েছিল, তখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারলে ব্যালটে কার নাম থাকবে?
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কোনো প্রার্থী যদি যে কোনো কারণে প্রার্থী থাকতে না পারেন - সেব্যাপারে স্পষ্ট বিধি রয়েছে।
সেক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন ঠিকই - কিন্তু তিনি রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী প্রার্থী বলে বিবেচিত হবেন না।
পার্টির নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় কমিটি ভোটাভুটির মাধ্যমে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচন করবেন। হয়তো সেভাবে মাইক পেন্স নতুন প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন, তবে তখন একজন নতুন রানিং মেটও বেছে নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অবশ্য আগে কখনো এ পরিস্থিতি হয়নি।
কিন্তু নির্বাচনের অনেক ভোট তো ইতোমধ্যেই দেয়া হয়ে গেছে - তার কী হবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিয়ে অনেক রকম অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হবে। কারণ, লক্ষ লক্ষ ভোট ইতোমধ্যে ডাকযোগে দেয়া হয়ে গেছে।
একজন বিশেষজ্ঞ, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক রিক হ্যাসেন বলছেন, সম্ভবত অসমর্থ হয়ে পড়া প্রার্থীর নাম-বিশিষ্ট ব্যালট পেপার দিয়েই ভোট চলতে থাকবে।
কিন্তু তার জায়গায় নতুন যে প্রার্থী আসবেন - তাকে রাজ্যগুলোর ইলেকটরাল কলেজের নির্বাচকমন্ডলী ভোট দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ব্যালট পেপারে নাম কি পরিবর্তন করা যাবে?
মার্কিন আইনের আরেক অধ্যাপক রিচার্ড প্লাইডস বলছেন, যাই ঘটুক না কেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম ব্যালট পেপারে থাকবে এটা প্রায় নিশ্চিত।
তিনি বলছেন, রিপাবলিকান পার্টি হয়তো প্রার্থীর নাম পরিবর্তন করার জন্য আদালতে যেতে পারে কিন্তু বাস্তবে তার জন্য যথেষ্ট সময় থাকবে না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন