আন্তর্জাতিক ডেস্ক /./
‘ভূস্বর্গ’ নামে পরিচিত ভারতের জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যে চলতি বছর বিপুল পরিমাণ পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল এক টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, চলতি বছর জম্মু ও কাশ্মির ঘুরতে আসা পর্যটকের সংখ্যা ভেঙে দিয়েছে গত ৭৫ বছরের রেকর্ড।
শুক্রবার এক টুইটবার্তায় পীযুষ গয়াল বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মির আবার পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সেখানে গিয়েছেন ১ কোটি ৬২ লাখ পর্যটক। এই সংখ্যা গত ৭৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।’
এ ঘটনাকে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের কৃতিত্ব দাবি করে টুইটবার্তায় কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের দূরদর্শী ও সুদূরপ্রসারী সংস্কার নীতির ফলাফলই হলো জম্মু ও কাশ্মিরের সাম্প্রতিক এই পর্যটকের জোয়ার।’
তুষার আচ্ছাদিত হিমালয় পর্বতমালা, প্রবল স্রোতে বহমান পাহাড়ি নদী, মোঘল আমলে তৈরি করা বিশাল সব বাগান, সুবিস্তৃত আলপাইন তৃণভূমি, নয়নাভিরাম হ্রদ ও সেই হ্রদের পানিতে ভাসতে থাকা সব সুন্দর ‘শিকারা’ (জম্মু ও কাশ্মির অঞ্চলের নৌকা)— সব মিলে উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আকর্ষণে কেন্দ্রবিন্দুতে আছে জম্মু ও কাশ্মির।
তবে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতালাভের পর থেকেই এই রাজ্য নিয়ে দশকের পর দশক ধরে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ভারতকে। কারণ, স্বাধীনতার পরপরই রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল দখল করে পাকিস্তান এবং বাদাবাকি অংশও নিজেদের বলে দাবি করতে থাকে।
জম্মু ও কাশ্মিরের যে অংশ পাকিস্তানের দখলে রয়েছে— সেটি বর্তমানে আজাদ কাশ্মির নামে পরিচিত। ভারতের সংবিধানে কাশ্মিরকে স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ায় স্বাধীনতার পর থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরেও ব্যাপক সক্রিয় ছিল পাকিস্তানপন্থী শক্তি।
কিন্তু ২০১৯ সালে পার্লামেন্টে এক গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরের স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করে এই রাজ্যকে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসনাধীনে নিয়ে আসে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। এ পদক্ষেপ নেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মিরে, তবে সেই বিক্ষোভ দমনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে বর্তমানে অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে বিক্ষোভ পরিস্থিতি।
পীযুষ গয়াল যদিও টুইটবার্তায় পর্যটকদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি, তবে ধারণা করা হচ্ছে এসব পর্যটকদের সিংহভাগই ভারতের নাগরিক বা অভ্যন্তরীন পর্যটক। নিরাপত্তাজনিত কারণে এখনও বিদেশি পর্যটকদের জম্মু ও কাশ্মির ভ্রমনে যেতে হলে বিশেষ পাসের প্রয়োজন হয়।
বাগান, কৃষি ও পশুপালনের পাশাপাশি পর্যটনও জম্মু ও কাশ্মিরের অর্থ উপার্জনের একটি বড় খাত। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মিরের রাজ্য অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের অবদান ৭ শতাংশ।
জম্মু ও কাশ্মিরেকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, তবে রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি এখনও শান্ত হয়নি। বিভিন্ন প্রান্তে এখনও চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
গত সপ্তাহে কাশ্মিরের কারাপ্রধান এক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন। কাশ্মিরের পাকিস্তানপন্থী একটি জঙ্গিগোষ্ঠী এই হত্যার দায় স্বীকারও করেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন