-মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে-করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেরে উঠতে সময় নেন, তাহলে আগামী ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কী হবে? নির্বাচন কি পিছিয়ে দেওয়া যাবে? কে বা কারা এ পরিবর্তন করতে পারেন? দেশটির আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নিজে নির্বাচন পেছাতে পারবেন না।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক ৩২ দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট। ফলে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের আগে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মৃত্যু কিংবা অভিষেকের আগে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে বা প্রার্থী অক্ষম হলে কী ঘটবে—এমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পেছানোর কর্তৃত্ব রয়েছে শুধু দেশটির আইনপ্রণেতাদের। নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিতে হলে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে এ প্রস্তাবটিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে। বিশ্লেষকরা বলেন, এমন সম্ভাবনা কম, কারণ নিম্নকক্ষ অর্থাৎ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে ডেমোক্র্যাটদের।
তারিখ পিছিয়ে দিলে আরও অনেক কিছু ঘটতে পারে। ধরা যাক, উভয় কক্ষ নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিল। কিন্তু মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের আয়ু হচ্ছে ঠিক চার বছর।
সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ আপনাআপনি শেষ হয়ে যাবে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি দুপুরে। নির্বাচনের তারিখ পাল্টালে সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে। তা করা যাবে তখনই, যখন দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা কিংবা রাজ্য পর্যায়ের আইনসভা এবং তারপর যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর তিন-চতুর্থাংশ তা অনুমোদন করে। তবে এ রকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা কম।
প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে কী হবে?
প্রেসিডেন্ট যদি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তাহলে মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন তিনি। প্রেসিডেন্ট সুস্থ হলে তিনি আবার তার পদে ফেরত আসবেন।
প্রেসিডেন্ট যদি ক্ষমতা হস্তান্তর করার মতো সুস্থও না হন, তাহলে তার মন্ত্রিসভা এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট তাকে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ ঘোষণা করতে পারেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট তখন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা নিতে পারেন।
এরপর যদি ভাইস প্রেসিডেন্টও দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল সাকসেশন অ্যাক্ট’ নামের আইন অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার এ দায়িত্ব নেবেন।
অবশ্য বর্তমানে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি যেহেতু একজন ডেমোক্র্যাট, তাই সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ রকম কোনো পরিস্থিতি হলে তা আইনি লড়াইয়ের জন্ম দিতে পারে।
স্পিকারও যদি দায়িত্ব না নেন, তাহলে একজন সিনিয়র রিপাবলিকান নেতা—বর্তমান পরিস্থিতিতে ৮৭ বছর বয়স্ক চার্লস ই গ্রাসলি—প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে পারেন। অবশ্য এটাও আইনি লড়াইয়ের জন্ম দিতে পারে।
আগে কতজন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়েছিলেন?
১৯৮৫ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ক্যানসারে অস্ত্রোপচারের জন্য যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ বুশ।
এরপর ২০০২ ও ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে কলোনস্কোপি করার জন্য অজ্ঞান করা হলে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান তার ভাইস প্রেসিডেন্ট।
দলের নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় কমিটির ভোটে নতুন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচন করবেন। হয়তো সেভাবে মাইক পেন্স নতুন প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন, তবে তখন একজন নতুন রানিংমেটও বেছে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অবশ্য এর আগে কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
কিন্তু নির্বাচনের অনেক ভোট তো ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর কী হবে?—এমন প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিয়ে অনেক রকম অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হবে। কারণ লাখ লাখ ভোট ইতিমধ্যে ডাকযোগে দেওয়া হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক রিক হ্যাসেন বলেন, সম্ভবত অসমর্থ হয়ে পড়া প্রার্থীর নামবিশিষ্ট ব্যালট পেপার দিয়েই ভোট চলতে থাকবে। কিন্তু তার জায়গায় নতুন যে প্রার্থী আসবেন, তাকে রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচকমণ্ডলী ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ব্যালট পেপারে নাম কি পরিবর্তন করা যাবে?
মার্কিন আইনের আরেক অধ্যাপক রিচার্ড প্লাইডস বলেন, ‘যা-ই ঘটুক না কেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম ব্যালট পেপারে থাকবে, এটা প্রায় নিশ্চিত।’ তিনি বলেন, রিপাবলিকান পার্টি হয়তো প্রার্থীর নাম পরিবর্তন করার জন্য আদালতে যেতে পারেন কিন্তু বাস্তবে তার জন্য যথেষ্ট সময় থাকবে না।
ট্রাম্প নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারলে ব্যালটে কার নাম থাকবে?—এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কোনো প্রার্থী যদি যেকোনো কারণে প্রার্থী থাকতে না পারেন, সে ব্যাপারে স্পষ্ট বিধি রয়েছে।
সে ক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন ঠিকই কিন্তু তিনি রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী প্রার্থী বলে বিবেচিত হবেন না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন