করোনাকালীন বিশ্বে বেড়ে যাওয়া বৈষম্য ও বঞ্চনা ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই প্রশমিত করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বকে আবারও উন্নয়নের ধারায় জোরালোভাবে ফিরিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা খাত, উদ্ভাবক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যমসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে বলেও মত দেন তারা।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত তিন দিনব্যাপী (১১-১৩ অক্টোবর) 'ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম' (ফিফ) শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারের পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশে কানাডিয়ান হাইকমিশনার ড. লিলি নিকলস, বাংলাদেশ সরকারের নীতি-বিষয়ক প্রধান আনির চৌধুরী, চাকমা সার্কেলের রানী ইয়ান ইয়ান, বিকাশ অ্যাপের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের বৈশ্বিক উন্নয়ন ও কৌশলবিষয়ক উপপরিচালক হিলারি মিলার-ওয়াইজ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মহামারি থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা মহামারি-পরবর্তী সময়ে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নীতিবিষয়ক প্রধান আনির চৌধুরী বলেন, মহামারি থেকে আমরা তিনটি জিনিস শিখেছি। সেগুলো হলো, সরকার, মোবাইল ফোন কোম্পানি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, ব্যক্তি মালিকানা খাতের মধ্যে তথ্য-উপাত্তের সমন্বয় ঘটানো সম্ভব; যার দ্বারা বিপুল মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। দ্বিতীয়ত, রিমোট প্রযুক্তিতে রোগ শনাক্তকরণ, পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি এবং মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীবাহিনী স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তৃতীয়ত, মহামারির সময় দ্রুত পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হোয়াটসঅ্যাপের মতো ডিজিটাল মাধ্যমের সফল এবং ব্যাপক যে ব্যবহার হয়েছিল তাকে মহামারি- পরবর্তী সময়েও অব্যাহত রাখতে হবে, যাকে আমরা হোয়াটসঅ্যাপ আমলাতন্ত্র বা হোয়াটসঅ্যাপ বুরোক্রেসি বলতে পারি।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান তার বক্তব্যে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত বিশ্বের সমস্যার কার্যকর সমাধান প্রসঙ্গে বলেন, এসব দেশে শুধুমাত্র তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, দৃঢ়ভাবে জেন্ডার সমতামুখী এবং জনমানুষের যাপিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উদ্ভাবিত সমাধানই সফল ও কার্যকর হতে পারে। এটাই তিন দিনব্যাপী এই ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম থেকে নেওয়া সারমর্ম।
তিনি বলেন, বৃহৎ পর্যায়ে রূপান্তর ঘটাতে হলে বিশ্বের নীতিনির্ধারক মহল ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরতদের একই ভাষায় কথা বলতে হবে। তারা ভিন্ন ভাষায় কথা বললে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।
সম্মেলনের শেষ দিনে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ কোভিড পরবর্তী 'নতুন-স্বাভাবিক' যুগে ব্র্যাকের ভবিষ্যৎ ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেন। এ সময় তিনি বলেন, ব্র্যাকের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে আমরা কাজ করে যাব। সমাজ ও দেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হবে। সরকার, ব্যক্তি মালিকানা খাত, উন্নয়ন অংশীদার এবং সামাজিক উদ্যোক্তাদের নিয়ে সমাধানমূলক যে ব্যবস্থাটি গড়ে উঠেছে আমরা তারই অংশ।
আসিফ সালেহ্ বলেন, ব্র্যাক আগেও যা করেছে এখনও ঠিক তাই করে যাবে। আমরা দেশে ও বিদেশে সরকার, ব্যক্তি খাত এবং পরিবর্তনের অগ্রদূতদের পাশাপাশি কাজ করে যাব। আমরা জানি, আমরা সকলে যখন হাতে হাত মেলাই তখনই সুন্দর সমাধানের দেখা পাই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন