নবীগঞ্জে ১বছর ধরে সার্ভার জটিলতার অজুহাত! জন্ম নিবন্ধন -সংশোধন জটিলতা সমাধানে নেই কোন উদ্যোগ

বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি॥

প্রশাসনিক সকল কর্মকাণ্ড ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবহার হওয়ায় জন্ম নিবন্ধন অপরিহার্য। পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, জমি রেজিস্ট্রেশন, করোনার টিকা, বিয়ে, স্কুলে ভর্তিসহ ১৭টি সেবার ক্ষেত্রে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন করায় ‘সার্ভার ত্রুটি’ অজুহাতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নবীগঞ্জ পৌরসভার সাধারণ মানুষকে। দীর্ঘ ১বছর ধরে এই জন্ম নিবন্ধন/সংশোধন জটিলতায় সার্ভারে সমস্যার সমাধানের কোন উদ্যোগ নেন নি পৌর কর্তৃপক্ষ। সেবাগ্রহীতাদের সাথে পৌর কর্মচারী এলেমান আহমেদ চৌধুরী’র চরম দূর্ব্যাবহারের অভিযোগ সহ কর্মচারীদের নিয়মিত মিথ্যাচারের অহরহ  অভিযোগ পাওয়া গেছে। জন্ম নিবন্ধন/সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পৌরসভার কর্মকর্তাগণ সাধারণ মানুষ ও সংবাদকর্মীদের বলেন- আমাদের এখানে একটি আবেদন করার পর আবেদনটি ৪/৫দিন পেন্ডিংয়ে থাকে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাছাই-বাছাইয়ের পর নিবন্ধন/সংশোধন হয়ে আমাদের কাছে আসে। বাইরে আবেদন করলে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের ফাইল আসে এর পর। তবে, জন্ম নিবন্ধনের কোন ফাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যায়না। এ ব্যাপারে পৌরসভায় জন্ম নিবন্ধন/সংশোধন করতে আসা একাধিক ভূক্তভোগী জানান, কারো জন্ম নিবন্ধন/সংশোধন ১০ দিনের মধ্যেই হয়, কারো ২০/২৫ দিন, কেউ আবার ১ বছরেও পান না! আবার কেউ কেউ আসা মাত্রই আবেদন হয়ে যায়!  কেউ কেউ ৪/৫/১০/১৫/২০ দিন ও মাসের পর মাস পৌরসভায় ধর্ণা দেওয়ার পর আবেদন করা হয়। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহেমদ চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, একটি জন্ম নিবন্ধন/সংশোধন করতে প্রথমে ৫টি উপকরন (প্রয়োজনীয় সঠিক কাগজপত্র) নিয়ে আসতে হয়। অনেকেরই এ ধরনের কাগজপত্র সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই আবেদন করতে আসেন। বারবার বুঝিয়ে বলার পরও ভূল কাগজপত্র নিয়ে আসেন। সঠিক কাগজপত্র ছাড়া আবেদন করা সম্ভব নয়। তারা ভূল কাগজ নিয়ে আসার কারনেই এমন বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে- পৌরসভায় ১বছর ধরে ধর্ণা দেওয়ার পরও জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে না পারার পর উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামারের কাছে বিষয়টি সমাধানের জন্য পৌরসভার কর্মচারী এলেমান আহমেদ চৌধুরী কর্তৃক চরম দূর্ব্যাবহারের শিকার হন এক নারী। শুধু ওই নারীই নন তার বিরুদ্ধে এমন দূর্ব্যবহারের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে এলেমান আহমেদ চৌধুরীর সাথে কথা হলে, তিনি ১ বছর ধরে ধর্ণা দেওয়ার বিষয়টিকে পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, চলতি মাসের ১৮ তারিখ তার আবেদন হয়েছে, তাহলে তিনি ১ বছর ধরে ধর্ণা দেন কীভাবে? পরে এর প্রমান দিলে তিনি বলেন, কে কতদিন ধরে আসে- যায় এসব খেয়াল করা আমাদের দায়িত্ব নয়! ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে আমার ৩ ছেলে- মেয়ের জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের জন্য পৌরসভায় আসলে পৌরসভা থেকে সঠিক কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। এবং পৌরসভার কর্মচারী বনানী দাশ আমাকে বিষয়টি বুঝিয়ে দেন। পরে সকল সঠিক কাগজপত্র নিয়ে আসার পরও তারা বলেন, কাল আসেন৷ কাল আসলে বলে, পরশু আসেন, ৩ দিন পর আসেন, ৭ দিন পর আসেন এমন করতেই থাকেন। পৌর কর্তৃপক্ষ এভাবে আমাকে হাটাঁতে থাকে। তাদের কথামতো আসার পরও তাদের আমার কাজ হয়নি। এই হয়রানির কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, সার্ভারে সমস্যা, কিছু করার নেই। দীর্ঘ ১ বছর হাটাহাটির পর গত ১৮ অক্টোবর পৌর ডিজিটাল সেন্টার থেকে আবেদন করলে পৌর কর্তৃপক্ষ জানান আবেদন হয়নি! পরে উপজেলা পরিষদের সামন থেকে একটি আবেদন করলেও পৌর কর্তৃপক্ষ বলে আবেদনটি তাদের কাছে আসেনি। পরবর্তীতে উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার কাজী মঈনুল হোসেনের কাছে গেলে তিনি বলেন, আবেদন হয়েছে। তবে, পৌর কর্তৃপক্ষ এখনও এপ্রুভ করেনি! পৌরসভায় গিয়ে বললেই হবে। তাদের কথা মতো পৌরসভায় গিয়ে উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামারের কথা বলতেই পৌরসভার কর্মচারী এলেমান আহমেদ চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনি ওইখানে কেন গেলেন? এ কথা বলার পর তিনি আমার সাথে চরম দূর্ব্যাবহার করেন। পরে আবারও উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামারের কাছে গেলে তিনি ৫ মিনিটের মধ্যেই সবকিছু ঠিক করে দেন। পরে পৌরসভায় সংশোধিত প্রিন্ট কপির জন্য গেলে প্রিন্টারে সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে ৪/৫ দিন পর আসতে বলেন। এ ব্যাপারে বিষয় নিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেন, একটি আবেদন করতে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট লাগার কথা, পৌরসভায় সারাদিনে ১০/১২টি আবেদনও হয় না! কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলেন, ওয়েবসাইটে সমস্যা। সমস্যা হলে পৌরসভার বাইরের দোকানগুলোতে আবেদন কি ভাবে হয়? তারা তো ঠিকই আবেদন করতে পারছে। পৌরসভার লোকজনের চাইতে কী তাদের প্রোগ্রামিং দক্ষতা ভাল? যদি ভাল হয় তাহলে এই অদক্ষ জনবল নিয়োগ কেন? ওয়েবসাইটে সমস্যা হতেই পারে, গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ১ বছর ধরেই শুনা যাচ্ছে সমস্যা চলতেছে, এই সমস্যা সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না? আর পদক্ষেপ নিলে কেনই বা এই ভূগান্তী? গত বৃহস্পতিবার সংবাদকর্মীদের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় পৌর মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ বলেন, জন্ম নিবন্ধন/সংশোধন নিশ্চিতের জন্য পৌরসভার কর্মকর্তাগণ খুবই আন্তরিকভাবে কাজ করছেন, এমনকি শুক্র ও শনিবার (ছুটির দিনগুলিতে) তারা অফিসে কাজ করেন। একাধিকবার পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে ও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে শুক্র ও শনিবার অফিস করার বিষয়টির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠে আন্তরিকভাবে কাজ করলে নারীদের সাথে এলোমান আহমদের চরম দূর্ব্যবহারের বিষয়টি কীভাবে দেখেন পৌর মেয়র? তবে, এটাই কী পৌরসভার কর্মকর্তাগণের আন্তরিকতা? এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহারীয়ার বলেন, জন্ম নিবন্ধন/সংশোধন আবেদনের কোন ফাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যায়না। এটা আমার কার্যালয়েই আসে। আবেদন ফাইল আসার পর সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ দিন লাগে। আবার অনেক সময় সাথে সাথেই হয়ে যায়। দূর্ব্যাবহারের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন