তীব্র সহিংসতা ও ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে কলেরায় ধুঁকছে সিরিয়া

জিবিনিউজ24ডেস্ক//     

‘তীব্র সহিংসতার’ সম্মুখীন হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া। ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটি বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখেও পড়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ২৪ হাজারেরও বেশি সন্দেহভাজন কলেরা রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ জন মারা গেছেন। জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বুধবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ‘কৌশলগত অচলাবস্থা’ সত্ত্বেও সিরিয়াজুড়ে সংঘাত ‘খুব সক্রিয়’ অবস্থায় রয়েছে এবং এই বিষয়টিই দেশটির সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু করার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

এ বিষয়ে তিনি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উত্তর আলেপ্পো প্রদেশের আফরিনে সশস্ত্র বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ, উত্তর-পশ্চিমে সরকারপন্থি বাহিনীর বিমান হামলা, উত্তর-পূর্বে সহিংসতা, দক্ষিণ-পশ্চিমে নিরাপত্তার ঘটনা, দামেস্ক ও আলেপ্পোর বিমানবন্দরে ইসরায়েলের বিমান হামলার ঘটনার ইঙ্গিত করেছেন।

পেডারসেন বলেছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিরিয়ার মুদ্রা ‘পাউন্ড’ ব্যাপক মূল্য হারিয়েছে … যার ফলস্বরূপ দেশটিতে খাদ্য এবং জ্বালানির দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, শীতকাল ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সিরিয়ায় চলমান অর্থনৈতিক সংকট দেশটির ‘বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য সবচেয়ে খারাপ হবে’ এবং এটি মোকাবিলায় জরুরিভাবে অতিরিক্ত তহবিল প্রয়োজন।

জাতিসংঘের মানবিক দপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনা বিভাগের পরিচালক রিনা গিলানি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ‘সিরিয়ার বিবদমান সম্প্রদায়গুলো নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে আটকা পড়েছে’। আর এই পরিস্থিতি কার্যত অনেককে ‘বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামের’ মুখে ফেলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, সিরিয়ার তীব্র পানির ঘাটতির কারণে কলেরার প্রাদুর্ভাব আরও খারাপ হয়েছে এবং অনেক জায়গায় অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত মারাত্মক খরার মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ইউফ্রেটিস নদীতে পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত পানির অবকাঠামোর কারণে সংকট আরও জটিল হয়েছে।

গিলানি বলছেন, ‘চলমান এই সংকট আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে: এখন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যদি সত্যিই তেমন কিছু হয় তাহলে সিরিয়ায় বিদ্যমান ভয়াবহ পানি সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের সমন্বয়ে কলেরা প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় একটি তিন মাসের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর জন্য ৫০ লাখ মানুষকে পানি, স্যানিটেশন এবং চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি সরঞ্জাম সরবরাহ এবং ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সহায়তা করার জন্য ৩৪.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

তার ভাষায়, জাতিসংঘ প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করবে। তবে এরপরও আরও অনেক কিছু প্রয়োজন।

এদিকে পানির ঘাটতির কারণে সিরিয়ায় ফসল উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানির ঘাটতিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এবারই সিরিয়ায় সবচেয়ে কম গমের উৎপাদন হয়েছে। এর ফলে কৃষকদের জীবন-জীবিকাও হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানান গিলানি।

তিনি বলছেন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে’, অপুষ্টির হার বাড়ছে এবং ‘সিরিয়ানরা তিন বছর আগে যে খাবার কিনতে পারতেন এখন তার মাত্র ১৫ শতাংশ কিনতে’ পারেন তারা।

গিলানি বলেন, শীতকাল ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সংকট আরও বাড়ছে। সিরিয়াজুড়ে শীত থেকে বাঁচতে সহায়তার প্রয়োজন এমন লোকের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। যার মধ্যে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষ শিবিরে বসবাস করছে। সেখানে গরম, বিদ্যুৎ, পানি বা পয়ঃনিষ্কাশনের সুযোগ খুবই সীমিত।

উল্লেখ্য, টানা ১১ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয়; সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনও চলছে।

এক দশকের এই সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন