কাশ্মির ইস্যুতে ভারতকে চাপ দেবেন সুনাক, আশা পাকিস্তানিদের

জিবিনিউজ24ডেস্ক//   

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন ঋষি সুনাক। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর চলতি সপ্তাহে সুনাককে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস।

ব্রিটেনের গত ২০০ বছরের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ এবং প্রথম অশেতাঙ্গ এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন পাকিস্তানিরা। তাদের আশা, ঋষি সুনাকের ‘শিকড়’ পাকিস্তানে হওয়ায় কাশ্মিরর সংকট সমাধানে ভারতকে চাপ দেবেন তিনি। গত বুধবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার ভারতীয় এবং হিন্দু ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। তবে তার শিকড় রয়েছে বর্তমান পাকিস্তানে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় পাকিস্তানের পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালা শহরে বসবাস করতেন সুনাকের পিতামহ অর্থাৎ দাদা।

সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে ভারত ও পাকিস্তানকে আলাদা তথা দেশভাগের সময় গুজরানওয়ালা শহরে ১৯৪৭ সালে বেশ কিছু মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল। তবে দেশভাগের সেই অস্থির সময়ের আগেই চাকরির জন্য পাকিস্তানের গুজরানওয়ালা শহর ছেড়ে কেনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন সুনাকের দাদা রামদাস সুনাক।

ভারতের সীমান্তবর্তী পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত শিল্প কেন্দ্র গুজরানওয়ালার অনেকেই আজ বলছেন, যুক্তরাজ্যের নতুন নেতা কাশ্মির সংকটের সমাধানের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করছেন। কারণ কাশ্মিরই দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বিবাদের মূল বিষয়।

এপি বলছে, সুনাকের দাদা রামদাস সুনাক এবং দাদী সুহাগ রানী ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত গুজরানওয়ালায় বসবাস করতেন। যদিও শহরের এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দার সেই অনেক আগের দিনগুলোর কোনো স্মৃতি নেই।

তারপরও তারা বলছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদে ৪২ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের বিজয়ে তারা আনন্দিত বোধ করছেন। তারা আশা করছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের অধীনে পাকিস্তান ও ব্রিটেনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে।

গুজরানওয়ালার কুস্তি খেলার বেশ সুনাম রয়েছে। মূলত এই খেলাটিই গুজরানওয়ালাকে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত করেছে। আর এই শহরেরই ওমর আলী নামে একজন কুস্তিগীর ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় বেশ খুশি। তিনি বলছেন, এটি আনন্দের বিষয় যে- যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীর পূর্বপুরুষদের মধ্যে অনেকেই এখানে বসবাস করতেন।

স্থানীয় এক কলেজের অধ্যাপক খুররম শেহজাদের আশা, ঋষি সুনাক শুধু পাকিস্তান ও ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতেই কাজ করবেন না বরং পাকিস্তান ও ভারতের জন্য ‘সাফল্যের নতুন যুগ’ নিয়ে আসবেন।

গুজরানওয়ালা শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৪৭ সালের দেশভাগকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ফলে সেই সময়কার বেশিরভাগ রেকর্ড ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সুনাকের দাদা শহরের ঠিক কোথায় থাকতেন তার কোনো প্রমাণ এখন আর নেই।

তবে গুজরানওয়ালার বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস, শহরের মাছলি বাজার এলাকায় হয়তো সুনাকের দাদা-দাদী বসবাস করতেন। কারণ সেসময় শহরের বেশিরভাগ হিন্দু সম্প্রদায় এখানেই বাস করত।

এপি বলছে, দেশভাগের আগে-পরে বহু হিন্দু এখান থেকে ভারতে চলে গিয়েছিল। তবে এখানকারই একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দির এখনও এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাসের প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।

মাছলি বাজার, নামটি অনুবাদ করলে হয় ‘মাছের বাজার’ এবং আশপাশের এলাকাটি তার সুস্বাদু খাবারের জন্য পরিচিত। প্রতি বছর খাদ্যপ্রেমীদের ভিড় এখানে লেগেই থাকে — তবে তা শুধু ভাজা মাছ নয়, অন্যান্য উপাদেয় খাবারের জন্যও মানুষ এখানে আসেন।

হাফিজ উমর নামে এক ব্যক্তির পরিবারের মাছলি বাজারে বসবাসের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তিনি বলছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে সুনাকের নিয়োগ আমাদের জন্য এবং আমাদের শহরের জন্য একটি সম্মানের বিষয়। আমরা আশাবাদী আগামী দিনে পাকিস্তান ও ব্রিটেনের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন