জিবিনিউজ24ডেস্ক//
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না। নিজের থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়ন করি কোন এলাকা আমাদের ভোট দিলো বেশি আর কোন এলাকা দিলো না- সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন। বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একমুঠো চালও দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি।
বুধবার (২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে চুন্নু তার প্রশ্নে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সব রাজনৈতিক দল নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন কি না জানতে চান।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সব দল নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়াার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে- দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছেন আমি সবার কথা বলছি- তাদের মধ্যে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা কি সমীচীন হচ্ছে? সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে ওই অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পথে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। আজ দেশব্যাপী ক্রাইসিস- এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থা ঘোলাটে করা আর ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্ট করা– এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করবো। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এর আগে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটা বলেছি। শুধু সতর্ক নয়, সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।
তিনি বলেন, আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাবো। খাদ্য উৎপাদন করবো। আমরা ব্যবহার করবো এবং আমরা সেটা করতে পারি। বাংলাদেশ পারে আমরা অনেকক্ষেত্রে এটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল আমরা নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্যমূল্য পরিবহনের জন্যও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম যুদ্ধের কারণে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্য, ডিজেল, তেল, সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। এমনকি এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং নিয়েছি।
গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সাথে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা)। এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে বিশ্ববাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারাবিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখনো পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি। ইউরোপ-আমেরিকা-গ্রেট ব্রিটনসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সব জায়গায় লোডশেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বেড়েছে। তারা সবকিছু রেশনিং করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। বারবার বলছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যখন বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব, মূল্যস্ফীতি তখন আমাদের দেশে নিজেদের মাটি ও মানুষ নিয়ে চলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।
বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না। এ জন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখে এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। এতে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের সাথে সাথে খোঁজা হয়, ধরা হয়। ইতোমধ্যে অনেক পণ্য কিন্তু খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তা বাজারজাত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সবসময় সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। এভাবে কোনো না কোনোভাবে পণ্য লুকিয়ে রেখে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চলমান থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রতিবেদন ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, বাংলাদেশে ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এই রিপোর্ট ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের। সিপিডি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় খাবারের দাম সবচেয়ে বেশি। যে ৪২ দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশ তার একটি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বারবার বলছেন দুর্ভিক্ষ হতে পারে সবাই যেন সাবধান হয়। প্রথম আলোর লিড নিউজ চাল-আটা-ভুট্টার দামে রেকর্ড। খোলা আটা জানুয়ারি ২০২০ সালে ছিল ৩০ টাকা সেটা এই অক্টোবরে এসে দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকা। মোটা চাল ২০২০ জানুয়ারিতে ছিল ৩২ টাকা, এ বছরের সেপ্টেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা। ভুট্টা ২৪ টাকা থেকে হয়েছে ৩৪.৫ টাকা।
পরে রুমিন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে তা জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার কিছু লোক থাকে এবং সেসব লোকের কথাই মাননীয় সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম তিনি নিয়েছেন তার মধ্যে একটা পত্রিকা কিন্তু আমি কখনো পড়ি না। পড়ি না এই কারণে তারা সবসময় উল্টো দিকে থাকে। এরা কখনো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক তা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা পছন্দ করে। পছন্দ করে এই জন্য যে তাদের একটু ভালো হয়তো কোনো রকম কদর বাড়ে সে জন্য। আর যে প্রতিষ্ঠানটির কথা বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানটি কোনোদিনই কোনো হিসাবেই তারা কোন জায়গা থেকে হিসাব পায় জানি না। এই হিসাব তাদের কখনোই সঠিক হিসাব হয় না।
তিনি বলেন, আজ সারাবিশ্বে যেভাবে পণ্যমূল্য বেড়েছে সেটা যদি দেখেন, সে তুলনায় বাংলাদেশে..। বাংলাদেশে তো দাম বেড়েছে আমি তো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই না আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে যারা ক্রয় করার সক্ষমতা রাখে না তাদের দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেডলাইন দিয়েছে সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ হিসাবে আসে না। বাংলাদেশ কয়েকটা দেশ থেকেই ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। প্রতিটা ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে একটা হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিকর। ভেতরে জাতি দেখুক সেটা সঠিক না। সঠিক তথ্য তারা দেয় না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।
সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠানটির কথা উনি উল্লেখ করেছেন সে প্রতিষ্ঠান তো কোনোকিছুই ভালো লাগে না তাদের। তাদের ভালো লাগে কখন, যখন সেনাশাসন ছিলো যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তাদের একটু কদর বাড়তো। এই আশায় তারা বসে থাকে এটাই বাস্তবতা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন