জিবিনিউজ24ডেস্ক//
তিন নম্বর জেলখানায় ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য সম্পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ওই দিনের ঘটনায় নিহত চার জাতীয় নেতাদের পরিবারের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সকালে নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত শেষে এ মন্তব্য করেন তারা।
তিন নম্বর জেলখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনী যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করেন। বিচক্ষণ ও দূরদর্শিতার সঙ্গে তারা সরকার পরিচালনা করেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাত্র আড়াই মাসের মাথায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। অবশ্যই এই দুই হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। এই হত্যার সম্পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত। কারণ আমরা দেখেছি ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর মিলিটারি শাসক গোষ্ঠী জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। যার মাধ্যমে বিচারের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হলো। পরে বিচার কাজ শুরু হলেও ২০০১ সালে এই বিচার কাজকে সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত করে প্রহসনমূলক একটা রায় দেওয়া হলো ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে।
সোহেল তাজ বলেন, পরে ২০০৮ সালে আবারও সেই মামলার এভিডেন্স, তথ্য ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্নভাবে তথ্য-প্রমাণ গায়েব করা হয়। যার কারণে ২০১৪ সালে আপিল বিভাগ বাধ্য হয় নিম্ন আদালতে রায় বহাল রাখতে। এক অর্থে আমরা জেল হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনও পাইনি। এখন এই বিচার পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো একটি সুষ্ঠু তদন্ত করে এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা। একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে নতুন প্রজন্মের কাছে জেল হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে পরিবেশন করতে হবে। আমরা যেন মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে পারি যাতে করে ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বরের মতো হত্যাকাণ্ড যেন আর দেশের মাটিতে না ঘটে।
জিয়াউর রহমান সামরিক আদেশ জারি করে বিচার নিষিদ্ধ করেছিল। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের মানুষ কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, আমাদের সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে বের করে নিয়ে আসা উচিত। হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল, কীভাবে কি হয়েছে। আমি মনে করি, সবকিছু জানার অধিকার আছে। সম্পূর্ণ তদন্ত করে বের করতে হবে। সত্য কিন্তু তেতো হয়৷ কিন্তু সবকিছু আনতে হবে। সব সত্যকে বের করে আনতে হবে।
কমিশন গঠনের বিষয়টি বিএনপি প্রহসন বলছে, এতে তারা বিচারে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় তদন্ত কমিটি হতে হবে গ্রহণযোগ্য। এমন মানুষ দিয়ে তদন্ত করতে হবে, যিনি সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য। এখানে যেন কোনো সন্দেহের অবকাশ না থাকে। এটা জাতির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।
আরেক জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মুনসুর আলির পরিবারের পক্ষে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের ছেলে রাজ বলেন, জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের আসামিরা বিদেশে পলাতক রয়েছে। আমাদের দাবি, এই ১০ খুনিকে ফেরত আনতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু বিশ্বের বড় বড় যে দেশগুলো মানবতার কথা বলে, আমাদের জাতীয় চার নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আহ্বান, আপনাদের দেশে খুনিরা লুকিয়ে আছে। তাদের অবিলম্বে ফেরত পাঠানো হোক এবং বিচার করা হোক।
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের কুশীলবরা আছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক। এজন্য সংসদ ও এর বাইরে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। আমাদের আইনমন্ত্রী বলেছেন, ডিসেম্বর মাসে একটি কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশনের মাধ্যমে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়ক, দেশে ও বিদেশে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হবে।
নিহত জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ছোট ছেলে এহসানুজ্জামান স্বপন বলেন, এই বিচার পেতে আমদের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসে তখন বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই বিচার ২০১৫ সালে শেষ হয়। আমার মা দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি এই বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন। আমাদের সৌভাগ্য যে তিনি এই বিচার দেখে গেছেন। যদিও তিনি রায় শুনে গেছেন তবে রায় বাস্তবায়ন দেখে যাননি।
তিনি বলেন, তদন্ত কমিশন গঠন করা জরুরি। কারণ এই হত্যাকাণ্ডের অনেক তথ্য প্রমাণ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই সাজা পেয়েছেন কিন্তু যারা নেপথ্যে ছিলেন তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়নি। তাই একটা কমিশন গঠন করে জাতীয় চার নেতা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যারা আছেন তাদের মুখোশ প্রকাশ করার দাবি জানাই।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন