"বাংলাদেশে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট ও নিরাপত্তা : খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন প্রবণতায় নতুন বিশ্ব" আলোচনায়// বঙ্গবন্ধুর সবুজ বিপ্লব বাস্তবায়নে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাকে অগ্রাধিকার, উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের জন্য আলোচকদের আহ্বান

সেন্ট্রাল আলবার্টা, কানাডা, ৬ নভেম্বর, ২০২২  -   বাংলাদেশে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট ও নিরাপত্তা : খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন প্রবণতায় নতুন বিশ্ব" শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা আজ (রোববার) সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় )"অনুষ্ঠিত হয়। বৈশ্বিক খাদ্য সংকট ও চলমান পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করে বিশিষ্ট গবেষক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদগনের  অংশ গ্রহণে বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এ আলোচনার আয়োজন করে. এতে সভাপতিত্ব করেন  কানাডা প্রবাসী  লেখক , গবেষক ও সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্বা দেলোয়ার জাহিদ।

যখন বিশ্বে খাদ্য সংকট  পরিস্থিতি অবনতির দিকে, আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার অস্থিতিশীল, খাদ্যের প্রাপ্যতা ও প্রবেশাধিকার পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি খারাপের  পথে এগুচ্ছে। বিশ্বব্যাপী যখন খাদ্যোৎপাদন ব্যাহত, সরবরাহ অনিশ্চিত,জ্বালানি ও সার সংকট, কৃষিপণ্যের সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ার উপক্রম  তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন দিনগুলোতে খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার পরিবর্তে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপকভাবে খাদ্যোৎপাদন বাড়ানোর কথা জোর দিয়ে বলছেন। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আসন্ন বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উপর গুরুত্বারূপ করে  বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে  খায়রুল আহসান মানিক (সহ-সভাপতি), যুক্তরাষ্ট্র থেকে সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল, মো. ফিরোজ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক,  এ এস এম শামসুল হাবিব, যুগ্ম সম্পাদক,  এসরার জাহিদ খসরু ও কানাডা থেকে সাইফুর হাসান প্রমুখ  অনুষ্ঠানে পার্লামেন্ট রিপোর্টিং  থেকে সংযোগে আসেন  কোষাধ্যক্ষ মো: সাজ্জাদ হোসেন.

মুখ্য আলোচক হিসেবে অংশ গ্রহণ করেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ণ একাডেমী (বার্ড) এর সাবেক পরিচালক, মানব সম্পদ পরিকল্পনা, কৌশলগত সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সংস্থাসমূহের আচরণ, প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন, এবং গবেষণা পদ্ধতির বিষয়ের  উপর গ্রন্থ লেখক  অধ্যাপক ড. আনোয়ার  জাহিদ। ড. আনোয়ার বলেন, বৈশ্বিক উৎপাদন ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারত,  এবং ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে  বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। দেশে চাহিদা অনুযায়ী বিকল্প অথচ প্রয়োজনীয় খ্যাদ্য সামগ্রী যেমন: আলু, মিষ্টি আলু, সয়া, সবজি ইত্যাদির চাষ বাড়াতে এবং খ্যাদ্যাবাস পরিবর্তনের জন্য ফুড ফেস্টিভ্যাল এর আয়োজন ও পুরস্কার বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তিনি কোস্টাল এরিয়াতে ফসল উৎপাদন এবং ফসল সংরক্ষণের উপর ও জোরারোপ করেন।

খায়রুল আহসান মানিক বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে খ্যাদ্যাবাস পরিবর্তনের ডাক দেয়া হয়েছে যা এখনো সফলতার মুখ দেখেনি। ভাতের বিকল্প হিসেবে আলু, বা মিষ্টি আলু খাওয়া এবং মাছের পরিপূরক হিসেবে সামুদ্রিক মাছ খাওয়াকে কয়েকটি এলাকা ছাড়া এখনো তোলে ধরা যায়নি। সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণ, বিতরণ ও  বিপণনে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, ব্যর্থ হয়েছি জাপানের মতো শৈবাল চাষকে জনপ্রিয় খ্যাদ্য পরিনিত করে তুলতে।

আলোচকগণ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খ্যাদ্য ব্যাঙ্ক গড়ে তোলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুরক্ষা, ভাতের উপর নির্ভরতা কমানো ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান।  

সভাপতি  দেলোয়ার জাহিদ বলেন, দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় এ হুমকি মোকাবেলা করতে বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কৃষিখাতে ভূর্তকি, সহজ শর্তে ঋণ দান , জ্বালানি ও সারের দামে ভারসাম্য আনায়ন ও এর মাধ্যমে অব্যাহত উৎপাদন বৃদ্বিকে ধরে রাখতে সহায়তা, খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাদ্যের সমতা রক্ষার জন্য উন্নত দেশগুলোর খাদ্য সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে হবে. এতে খাদন সামগ্রীর  খরচ  অর্ধেকের চেয়ে ও বেশি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে ।  

দেলোয়ার জাহিদ আরো বলেন  ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরপরই সবুজ বিপ্লবের সোনালী রশ্মি বাংলাদেশের মাটিকে  স্পর্শ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবুজ বিপ্লবের প্রতি খুব দ্রুত সাড়া দেন এবং নবজাতক দেশে একটি কৃষি বিপ্লবের আবেদন জানান। কৃষি উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন. কৃষি খাতে আধুনিকীকরণে, কার্যকর নীতিগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহ কৃষিক্ষেত্রে কাজ করা সরকারি কর্মকর্তাদের মর্যাদার আসনে উন্নীত করেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ একটি জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট এম রহমত আলী "বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনা" শিরোনামের একটি নিবন্ধ উল্লেখ করেছেন যে সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শিক্ষিত লোকদের তাদের গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করতে এবং দেশের উৎপাদনে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। "বাংলাদেশ এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ টি নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে এবং সবজি ও মাছ সহ বিভিন্ন কৃষি উৎপাদনে একটি টেকসই অবস্থান নিশ্চিত করেছে কারণ বঙ্গবন্ধু কৃষি গবেষণা ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন এবং দেশের প্রযুক্তি ভিত্তিক আধুনিক কৃষি প্রবর্তন করেছিলেন। বিশ্বে সবুজ বিপ্লবের পথিকৃৎ ডাঃ নরম্যান ই বোরলাগ  একজন দূরদর্শী নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন যিনি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, উদ্ভাবন, স্বপ্ন এবং নেতৃত্ব দিয়ে ক্ষুধার বিরুদ্ধে নীরব ও একটি সর্বজনীন যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। অলৌকিক উচ্চ ফলনশীল আধা-বামন গমের জাতটিকে  দুই দশকের কঠোর সংস্করায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত করেছিলেন। বাংলাদেশ আগামী দিনে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে খ্যাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে।


সভার প্রারম্ভে গত শনিবার সাংবাদিক খায়রুল আহসান মানিকের বড়বোন লুত্ফুন্নেসার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয় এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়.

মুহিব খানের কণ্ঠে কৃষকের গান বাজিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়. সভাপতি  দেলোয়ার জাহিদ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন প্রবণতাকে উৎসাহিত করতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আলোচনা সমাপ্ত করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন