মাস্কের সৌদি ঘনিষ্টতা খতিয়ে দেখতে চান বাইডেন

জিবিনিউজ24ডেস্ক//    

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফরম ও মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে সৌদি বিনিয়োগ ও সৌদি অভিজাতদের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্টতার ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার মতে, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই এ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে প্রশ্ন করেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনি কি মনে করেন, ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং টুইটার কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিদেশি সরকার, বিশেষ করে সৌদির সরকার মাস্কের সঙ্গে যৌথভাবে যে বিনিয়োগ করেছে, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই সরকারি সংস্থাগুলোর উচিত তার তদন্ত শুরু করা?’

জবাবে বাইডেন বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রযুক্তিখাতে ইলন মাস্কের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সরকারের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কটি খতিয়ে দেখার যোগ্যতা রাখে।’

‘তিনি কোনো অনিয়ম করেছেন কি করেননি—আমি বলতে চাইছি না... শুধু বলছি, ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার যোগ্য। এই প্রসঙ্গে আমার অবস্থান এটাই।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্ট ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক প্রতিষ্ঠান মেটার শীর্ষ নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে চলতি বছর এপ্রিলে টুইটার কেনার ঘোষণা দেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। ৪৪ কোটি ডলারের বিনিময়ে টুইটার ক্রয় বিষয়ক চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেন। তবে তার পরের মাসেই চুক্তি থেকে সরে আসতে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে আদালতের দ্বারস্থ হয় টুইটার কর্তৃপক্ষ। টানা ৫ মাস শুনানির পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে টুইটারের পক্ষে রায় ঘোষণা করে আদালত বলেন, চুক্তিতে লিখিত মূল্যেই টুইটার কিনতে হবে মাস্ককে এবং ২৮ অক্টোবরের মধ্যে চুক্তির ৪৪ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। সেই অনুযায়ী, আদালতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই টুইটার কেনেন মাস্ক।

তবে টুইটার কেনার ক্ষেত্রে মাস্ককে ১৮৯ কোটি ডলার দিয়েছেন সৌদি রাজপরিবারের সদস্য ও রাজপুত্র আলওয়ালিদ বিন তালাল। টুইটারের অন্যতম শেয়ারহোল্ডারও তিনি।

এই ব্যাপারটিই অস্বস্তিতে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে। ২০০১ সালে সৌদি বংশোদ্ভূত ইসলামী চরমপন্থী ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আলকায়দা নেটওয়ার্ক নিউইয়র্কে বিমান হামলা চালানোর পর থেকেই সৌদি আরবের অভিজাতগোষ্ঠীকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিনীদের, বিশেষ করে ডেমোক্রেটিক পার্টিপন্থী মার্কিন নাগরিকদের এই উদ্বেগ আরও গভীর হয়েছে ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যার ঘটনায়। তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে নিহত জামাল খাসোগি সৌদি ভিন্নমতাবলম্বী ও দেশটির রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিশ্বের প্রথম সারির মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টে কর্মরত ছিলেন খাসোগি।

বাইডেন প্রশাসনের অভিযোগ, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছে জামাল খাসোগিকে। যুবরাজ অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন, কিন্তু বাইডেন প্রশাসন তাতে আস্থা রাখতে পারেনি।

এদিকে, টুইটারে সৌদি রাজপুত্রের বিনিয়োগ নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্তের দাবি উঠেছে জো বাইডেনের রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে। চলতি নভেম্বরের শুরুর দিকে ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মারফি এক চিঠিতে এ সম্পর্কে বলেন, ‘গণযোগাযোগে টুইটারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং আমি এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সৌদি সরকারের সুপ্ত প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।’

এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ ও চীন-তাইওয়ান সম্পর্ক প্রসঙ্গে মন্তব্য করে আলোচিত হয়েছিলেন ইলন মাস্ক। তিনি বলেছিলেন, এই দু’টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার ইউক্রেন ও তাইওয়ানের সাধারণ জনগণেও ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক।

এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তার সাক্ষাৎ হয়েছে বলেও এক টুইটাবার্তায় জানিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া সম্প্রতি চীন-তাইওয়ান ইস্যুতে মাস্কের অবস্থানকে প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত।

এসব কারণে ইলন মাস্ক সম্পর্কে বাইডেন প্রশাসনের মনোভাব সন্তোষজনক নয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন