সাদুল্লাপুরের ভাঙা ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে সিন্দুবালার

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা ||

সিন্দুবালা সরকার। বয়স ৬২ বছর ছুঁইছুঁই। ছয় বছর আগে মারা গেছেন স্বামী। তার কোনো সন্তান নেই। অন্যের বাড়িতে শ্রম দিয়ে কোনোমতে জীবন চলে। থাকার একটা ঘর আছে কিন্তু সেটিও ভাঙা আর ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড় বৃষ্টি আসলে মাথার ওপর দিয়ে যায় সব। আতঙ্কে ভাঙা ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে তার।

এই বৃদ্ধা সিন্দুবালার বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের ইউনিয়নের তরফবাজিত (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের। এই গ্রামের মৃত মনিন্দ্রনাথ সরকারের স্ত্রী।সোমবার (১৩ নভেম্বর) সরেজমিনে জানা যায়, মাত্র কয়েক শতক জমিতে রেখে সিন্দুবালার স্বামী মারা গেছেন। এছাড়া নেই কোনো সহায়-সম্বল। ইতোমধ্যে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও জীবিকার তাগিদে ছুটতে হচ্ছে কৃষকের মাঠে বা অন্যের দুয়ারে। বেঁচে থাকার তাগিদে কখনো কৃষকের ফসলি জমিতে শ্রম বিক্রি, আবার কখনো অন্যের বাড়িতে করতে হয় ঝিয়ের কাজ। এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন সিন্দুবালা। কিন্তু সিন্দুবালার বয়স হয়েছে। শরীরে আগের মতো আর শক্তি নেই। এ কারণে কাজের জন্যও কদর কমেছে তার। বার্ধক্য বয়স ও নানা অসুস্থতার কারণে এলাকার মানুষ তাকে এখন কাজের জন্য তেমনটা ডাকেন না। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে সিন্দুবালাকে।অসহায় ওই বিধবার একমাত্র শোবার ঘরটিরও জরাজীর্ণ অবস্থা। ছিদ্র টিনের চালায় লাগানো হয়েছে পলিথিন ও ট্রিপল। দিনের বেলায় বেড়ার ফুটো দিয়ে দেখা যায় সূর্যের আলো। রাতে চালার ওপর দিয়ে নজরকাড়ে আসমানের তারা। জোড়াতালি এ ভাঙা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন সিন্দুবালা। এক মুঠো অন্নের যোগানে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাবেন কিন্তু চোখে আসে না ঘুম। শীতের কুয়াশায় আর বৃষ্টি-বাতাসে আতঙ্কে একাকী নির্ঘুম রাত কাটে তার। বর্ষাকালে আকাশের মেঘ দেখলে দৌঁড় দিতে হয় অন্যের বাড়িতে। আর শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় ভিজে যায় বিছানাপত্র। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ঝুঁকিপুর্ণ এ ঘরে বসবাসের কারণে বিভিন্ন রোগ বাসা বেধেছে সিন্দুবালার শরীরে। এসব রোগ নিরাময়ে নিয়মিত ওষুধ খাবেন, এমন সামর্থও নেই তার। একেবারই জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে কোনোমতে বেঁচে রয়েছে ওই ভাঙা ঘরটিতে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরেই একাকী বসাবাস করে চলছেন তিনি।

কান্নাজড়িত কন্ঠে বিধবা সিন্দুবালা বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দে ঘর পাবার জন্যে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন কাজ হয়নি। কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আমাকে যদি একটু মাথা গোজার ঠাঁই করে দিতেন, তাহলে হয়তো শেষ বয়সে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।’স্থানীয় সুনিল চন্দ্র সিপন নামের এক ব্যক্তি জানান, স্বামী হারিয়ে সিন্দুবালা এখন খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। একটি মাত্র ঘর, তাও আবার ভাঙা। একদম বসবাস অনুপযোগী। সরকারি কিংবা কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান তাকে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হতো।

জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মন্ডল জানান, অন্যান্য ব্যাপারে সিন্দুবালাকে সুবিধা দেওয়া হয়। ঘরের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে।

সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, জামালপুর ইউনিয়নে যখন খাস জমিতে ঘর নির্মাণ হবে, তখন উনি যদি সেখানে যেতে চান তাহলে ঘর দেওয়া যাবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন