বাংলাদেশে সামুদ্রিক খাদ্যের সন্ধান, মৎস্য আহরণ, উন্নয়ণ এবং অর্থনীতিতে এর অবদান

দে লো য়া র   জা হি দ ||

বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে তীরে অবস্থিত ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকা নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশে অপরাপর বা সমপর্যায়ের দেশগুলোর  অভিজ্ঞতা নিয়ে সমুদ্রভিত্তিক একটি অর্থনীতি গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।  অর্থনীতিতে  বিপ্লবিক পরিবর্তন আনার ও টেকসই উন্নয়নে সমুদ্রসম্পদকে ব্যবহারের পরিকল্পনা ও সুদূরপ্রসারী কৌশল গ্রহণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ দেশের জন্য অনেকটা অবিশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র যেমন-  উপকূলীয় সুরক্ষা ও নজরদারির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ , মৎস্য চাষ, মৎস্য আহরণ, জাহাজ চলাচল, জ্বালানি, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে হবে.

বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতি এ দেশের উল্লেখযোগ্য একটি দিককে প্রতিনিধিত্ব করে; যা আমাদের  জাতির  ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও প্রতিফলিত করে। খাদ্য সবসময় বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে সংযোগ স্থাপনে একটি গতিশীল ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে.  বৈচিত্র্যময় বৈশ্বিক খাদ্য সংস্কৃতি থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে।বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে  ভাত, মাছ, ডাল সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী খাবার। পান্তা ইলিশ, কাচ্চি বিরিয়ানি, ভুনা খিচুড়ি/ খিচুড়ি, মরগ পোলাও, রুটি, নান রোটির সাথে গ্রিল চিকেন বা মাংস, হালিম, সিক কাবাব, ও পুচকা ছাড়াও কয়েক ডজন মিষ্টি, চালের কেক, চালের পুডিং এবং অন্যান্য অনেক মিষ্টান্ন যা  চাল এবং গরুর দুধ দিয়ে তৈরি যা  আমাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ।

জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী কানাডিয়ান তথা উত্তর আমেরিকান খাবার ফরাসি সহ আদিবাসী, ইংরেজি,  ইতালীয়, ইউক্রেনীয়, রাশিয়ান, পোলিশ, চীনা, ভিয়েতনাম, ইরানি, জ্যামাইকান, ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান  এবং অন্যান্য ভিন্ন সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। ঐতিহ্যবাহী কানাডিয়ান খাবারের মধ্যে পাউটিন (কুইবেক), মন্ট্রিল ব্যাগেলস (মন্ট্রিল), শৈলী ধূমপান করা মাংস (মন্ট্রিল),  স্টিমড হট-ডগ (মন্ট্রিল), স্প্লিট মটর স্যুপ (ক্যুবেক), Pouding au chômeur (কুইবেক), হাওয়াইয়ান পিজা (অন্টারিও) সে সাথে ঠান্ডা জলবায়ুর কারণে, বিস্তৃত স্যুপ পানের বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। শুধুমাত্র খাবারের ম্যেনুই  গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং খাবারগুলি কীভাবে পরিবেশন করা হয়, আমন্ত্রণের দেয়ার উপায় এবং অতিথিদের সাথে আচরণ করার নানা ধরন যা একটি পরিপূর্ন খাদ্য সংস্কৃতি তৈরি করে।

বিশ্বের ৩ বিলিয়নের ও বেশি মানুষ প্রাণীজ প্রোটিনের  উৎস হিসাবে বন্য-ধরা এবং চাষকৃত সামুদ্রিক খাবারের উপর নির্ভর করে। বিশ্বের বৃহত্তম ব্যবসায়িক খাদ্য পণ্য হিসাবে ও সামুদ্রিক খাবার কোটি কোটি মানুষের ভরণপোষণ করে আসছে । মানুষ সর্বভুক হিসাবে সমস্ত মাংস, গরুর মাংস, শুকরের মাংস থেকে মুরগি ও মাছ খাদ্য হিসেবে নেয়, ৯টি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের উচ্চ ও সুষম পরিমাণে সম্পূর্ণ প্রোটিনযুক্ত । উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনগুলিকে "সম্পূর্ণ" হিসাবে বিবেচনা করা হয় না কারণ প্রায় সমস্ত উদ্ভিদ প্রোটিনে এক বা একাধিক প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের অভাব থাকে । প্রায়শ লক্ষ্যণীয় উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনগুলিও ভারসাম্যহীন  হয়    - কিছু ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিডের মধ্যে বেশি, তবে অন্যগুলিতে তা কম। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে নিরামিষাশী এবং অনিরামিষাশীরা তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত অ্যামিনো অ্যাসিড পাচ্ছেন না—উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের সঠিক বৈচিত্র্য গ্রহণ করলে শরীরকে ৯টি প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করতে পারে।  বিভিন্ন খাবারের অ্যাক্সেস সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

মাছ  প্রোটিন হিসাবে বিশ্বব্যাপী (৬.৭%) ও প্রাণীজ প্রোটিন যা বিশ্বে মাংস খাওয়ার ১৭% প্রদান করে। মাছ অনেক মানুষের জন্য একটি বহিরাগত পুষ্টির ভূমিকা পালন করে; ৩.১ বিলিয়ন মানুষ তাদের দৈনিক প্রোটিন গ্রহণের জন্য ২০%  মাছের উপর নির্ভর করে, কিছু উপকূলীয় সম্প্রদায় ৭০% এর ও উপরে মাছের উপর নির্ভরশীল।  বিশ্বের অনেক মানুষ তাদের স্থানীয় জলবায়ুতে উৎপাদিত খাবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ; সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় খাদ্যের জন্য তারা বাণিজ্য, পরিবহন এবং হিমায়ন এর স্থিতিশীল ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল —বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ,  হয়ে দাঁড়িয়েছে
বাংলাদেশের জন্যেও !

বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের বেশিরভাগই নিষ্পত্তি করেছে। বর্তমানে সামুদ্রিক জীবন সম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইনি কাঠামো ও রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের (MoFL) বিভাগ মৎস্য বিভাগ (DoF) দ্বারা সময়ে সময়ে জারি করা আইন, নীতি, বিধি, উপবিধি, সংবিধিবদ্ধ ও আইন দ্বারা সমুদ্র শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয় । সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০২০ (২০২০ আইন) হল এর প্রধান আইন। সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩ যা উপরে উল্লিখিত বেশিরভাগ বিষয়গুলি এ আইন কভার করে। তাই, এ নতুন আইন এমন কিছু দেয় না যা বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনার উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নত করা সম্ভব। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানগুলো পর্যালোচনা করে একটি সময় ও যুগোপযোগী আইন করতে হবে. এ ক্ষেত্রে কানাডা মেরিন অ্যাক্ট কে যদি পর্যালোচনা করা হয় তবে দেখা যাবে ১৯৯৪ সালে কানাডার পরিবহন মন্ত্রী ডেভিড কোলেনেটের তত্ত্বাবধানে যে আইন পাস করা হয়েছিল,এর উদ্দেশ্য ছিল কানাডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলিকে আধুনিকীকরণ করা এবং "কানাডিয়ান বন্দরগুলির ব্যবস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক, দক্ষ এবং বাণিজ্যিকভাবে ভিত্তিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠা করা।

বাংলাদেশের বিশাল সাগরসীমায় কী আছে এবং কীভাবে সে সম্পদকে  কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করা সম্ভন এ সিদ্ধান্ত গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে । অগ্রাধিকার দিতে হবে, দেশের গণ মাধ্যমকে ও যেন বিষয়গুলো তুলে ধরা সম্ভব হয় যে সমুদ্রের অভ্যন্তরে কত গ্যাস মজুদ, খনিজ সম্পদ ও  স্কুবা ট্যুরিজম এর মতো খাতকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, কিভাবে বাংলাদেশ প্রতি অর্থবছরে সমুদ্র অর্থনীতি থেকে  লাভবান হতে পারে এ সব ব্যাপারে অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ করা। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নততর জীবিকা ও খাদ্যের সংস্থান এবং কাজের লক্ষ্যে সামুদ্রিক পরিবেশেকে  উন্নয়ন এবং সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপের্ পাশাপাশি মৎস্য চাষ, জাহাজ চলাচল, জ্বালানি, পর্যটন, উপকূলীয় সুরক্ষা এবং নজরদারির বিষয়গুলোকে স্বমন্বিতভাবে ভাবে মোকাবেলা করা. সমুদ্রসম্পদ অনুসন্ধান এবং আহরণের জন্য প্রয়োজনিয়  প্রণোদনা ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদকে ব্যবহার করে অর্থনীতিতে মোট আয়ের অর্ধেকের ও বেশি জোগান দেয়া সম্ভব, সম্ভব দেশের যেকোনো খাদ্য সংঙ্কটের আশংকাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং জীবনমানকে উন্নত করা।

[লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার, সভাপতি, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক, কানাডা নিবাসী]

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন