সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা ||
উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলবিশ্বের প্রথম হিজড়া জনগোষ্ঠীর (তৃতীয় লিঙ্গ) মাদরাসা দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসার ২য় বর্ষপূর্তি । তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে আলো ছড়িয়ে দিতে মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০২০ সালে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দাওয়াতুল কোরআন।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ছাতা মসজিদ রোড এলাকায় অবস্থিত মাদরাসা 'দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসার' ২য় বর্ষপূর্তি পালন করে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মাদরাসার প্রধান পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আবদুর রহমান আজাদ।
কওমি মাদরাসা ভিত্তিক পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে বিনাখরচে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়াবলী পাঠদানে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। অনুষ্ঠানে সকল হিজড়া শিক্ষার্থীদেরকে একটি করে পবিত্র কোরআন শরীফ প্রদান করা হয়। এ মাদ্রাসার সাফল্যের ২য় বর্ষপূর্তি উদযাপনের কার্যক্রমে তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের হামদ-নাত, আজান, ও কিরাত প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করে। এ প্রতিযোগিতায় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
মাদরাসার প্রধান পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ আবদুর রহমান আজাদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম আল্লামা মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মিরপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ ও জা. মো. আ. মাদরাসা কমপ্লেক্সের মুহতামিম আল্লামা মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ, মসজিদ-ই বায়তুল ফালাহ'র খতিব মুফতি আব্দুল্লাহ কাসেমী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা নাজীর মাহমুদ, নিউ মার্কেট সিটি কমপ্লেক্সের খতিব হাফেজ মাওলানা লুৎফর রহমান, ধানমন্ডির মসজিদ উত-তাকওয়া সোসাইটির খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম, কলাবাগান মাসজিদ-ই বাকাতিল মুবারাকাহর খতিব মুফতি আবু মুহাম্মাদ রহমানী, বরগুনার হুজুর মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
বিশেষ মেহমান হিসেবে ছিলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. সাইদুল ইসলাম মাদবর ও বাংলাদেশ পুলিশ হাসপাতাল প্রাক্তন চীফ কনসালটেন্ট ডা. মোরশেদুল আজম প্রমুখ।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর (তৃতীয় লিঙ্গ) জন্য এ মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দেশব্যাপী হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে আসছে। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪০টি শাখা চালু করেছে।
মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আব্দুর রহমান আজাদ বলেন, 'এখানে পড়াশুনা করতে শিক্ষার্থীদের কোনও খরচ লাগেনা। এই মাদরাসা একটি সম্পূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি সম্পূর্ণ বেসরকারি এবং অরাজনৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজনীতির বিন্দু পরিমাণ কোন সম্পৃক্ততা নেই। আপাতত মাদরাসাটি অনাবাসিক তবে শিশু হিজড়াদের জন্য আবাসিক বেবস্থা আমরা করেছি। যাদের বয়স পনেরো বছরের কম তাদের জন্য আবাসিক এবং থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি।'
প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, "এই হিজড়া জনগোষ্ঠীর (তৃতীয় লিঙ্গ) জন্য সংসদে একজন প্রতিনিধি চাই। আমাদের মাঝে অনেক অনেক প্রতিভাবান রয়েছে। এই প্রতিভাবান হিজড়া জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে আমরা প্রমান করে দিতে চাই, এরা সবচেয়ে ভাল মানুষ।"
অনুষ্ঠানে হিজড়া জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন, গুরুমাতা চামেলি, গুরুমাতা রানী চৌধুরী, গুরুমাতা ইভানা আহমেদ, গুরুমাতা নাদিরা, গুরুমাতা গুরুমাতা রুবি আক্তার, মাহি (ঢাকা), গুরুমাতা পার্বতী, গুরুমাতা শোভা সরকার, গুরুমাতা হাজী ফুলকলি, গুরুমাতা মাহি (কক্সবাজার), গুরুমাতা ভাণ্ডারী রানা,গুরুমাতা জেরিন, গুরুমাতা ঝরনা, গুরুমাতা তনু, গুরুমাতা মিতু, গুরুমাতা রিনা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ৬ নভেম্বর ২০২০ সালে দাওয়াতুল কোরআন তৃতীয় লিঙ্গ মাদরাসাটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই মাদ্রাসাটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে হিজড়াদের লেখাপড়ার জন্য কোনও খরচ লাগেনা। ২০২০ সালে সরকার স্বীকৃত কওমি সিলেবাস অনুযায়ী মাদ্রাসাটি পরিচালিত হচ্ছে। ২০২০ সালে মাত্র ১০ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে অনাবাসিক এই মাদ্রাসাটির যাত্রা শুরু করে ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন