জিবিনিউজ24ডেস্ক//
নতুন একটি আন্তঃমহাদেশীয় (আইসিবিএম) ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া। প্রতিবেশী দেশ জাপানের দাবি, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০ টার দিকে রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে দেশটি। জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশে হোক্কাইডোর উপকূল থেকে ২১০ কিলোমিটার দূরে সাগরে পতিত হয়েছে সেই আইসিবিএম।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা এক বার্তায় বলেন, উৎক্ষেপণের পর নতুন এই আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্রটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ১০০ কিলোমিটার উচুঁতে উঠেছিল এবং তারপর ১ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সাগরে পতিত হয়।
পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল বলেই সেটির গতিপথ এমন ছিল উল্লেখ করে বার্তায় জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্রটির ট্র্যাজেক্টরি (গতিপথ) হিসেব করে আমরা জানতে পেরেছি, যদি সত্যিই হামলার উদ্দেশ্যে এটি ছোড়া হয়— সেক্ষেত্রে এটি ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এর অর্থ, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড এই ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে।’
এই আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক বোমা বহন করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন ইয়াসুকাজু হামাদা।
উত্তর কোরিয়া সাধারণত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপন করে না। গত ২ মাসে প্রায় ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া, কিন্তু সেসবের সবই ছিল স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।
গত রোববার কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল, এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। সে বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জেরে দেশটিকে চাপে রাখতে নিজেদের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একমত হন এই তিন দেশের সরকারপ্রধান।
তারপর বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমকি দেন— কোরীয় উপসাগর কিংবা তার আশপাশের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি দেখা গেলে ‘ভয়ঙ্কর’ প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
তার সেই হুমকির দু’দিনের মধ্যেই নতুন এই আইসিবিএম উৎক্ষেপণ করল পিয়ংইয়ং।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এক রাষ্ট্রীয় সফরে থাইল্যান্ড গেছেন। সেখান থেকে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমরা পিয়ংইয়ংকে আগেও বলেছি, আবারও বলছি— এ ধরণের আচরণ আমরা সহ্য করব না।’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েনে ওয়াটসন বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উত্তর কোরিয়ার আইসিবিএম উৎক্ষেপণ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে এবং মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে।
আর দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া কোরীয় উপসাগরে সম্প্রতি সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর থেকেই একের পর এক পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে উত্তর কোরিয়া।
গত অক্টোবরে পিয়ংইয়ংয়ের ছোড়া একটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের আকাশসীমার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে সাগরে পতিত হয়েছিল। পাঁচ বছর পর প্রথম এমন কাণ্ড ঘটেছে বলে সেসময় উল্লেখ করা হয়েছিল বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে নিজেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে রাখা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ। বর্তমানে হোয়াসং ১৭ নামের একটি নতুন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রস্তুত ও পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সফল হলে হোয়াসং ১৭ হবে উত্তর কোরিয়ায় মজুতে থাকা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী।
কারণ, সাধারণ দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যেখানে একটি পারমাণবিক বোমা বহন করে, সেখানে নতুন এই হোয়াসং ১৭ একাধিক পারমাণবিক বোমা বহন করতে সক্ষম।
চলতি মাসের শুরুতে পিয়ংইয়ং একবার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানা গেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সূত্রে।
তবে আন্তর্জাতিক থিঙ্ক ট্যাংক সংস্থা এশিয়ান ইনস্টিটিউটের সামরিক বিশেষজ্ঞ ইয়াং ইউকের মতে, উত্তর কোরিয়ার নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে নতুন করে উদ্বিগ্ন হওয়া নিষ্প্রয়োজন।
‘পিয়ংইয়ং আসলে বলতে চায়—তারা ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সমরাস্ত্র প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। হামলা চলানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের আছে বলে মনে হচ্ছে না,’ বিবিসিকে বলেন ইয়াং ইউকে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন