জিবিনিউজ24ডেস্ক//
কেঁচো খুঁড়তে সাপ। কথাটা শুনেছেন নিশ্চয় আজ যে সিরিজ নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি তার গল্প কিছুটা এমনই। ছোট একটা সত্য খুঁজতে যেয়ে কীভাবে বিশাল এক সত্যের ভান্ডার সামনে এসে ধরা দেয়, তারই এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ এ সিরিজ।
কিছুদিন আগে উত্তরায় মর্মান্তিক ক্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান কয়েক জন। ঘটনা হয়ত সবার জানা। কিন্তু জানেন কী এমন আরও কত দুর্ঘটনার কথা আমরা জানি না? ভাবছেন কী বলছি হরহামেশায় এক্সিডেন্ট হচ্ছে আমরা জানতেও পারছি এ আর এমন কী। আমি সাধারণ কোনো দুর্ঘটনার কথা বলছি না। আমি বলছি, উন্নয়নের বোঝায় চাপা পড়া অসহায় মানুষের আর্তনাদের কথা। প্রতিদিন দেশে হাজার হাজার দুর্ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে কিছু অনিচ্ছাকৃত কিছু ইচ্ছাকৃত। একদিকে বিশাল বিশাল অবকাঠামোর উন্নয়নে বহির্বিশ্বে ফুলঝুরি অন্যদিকে কোনো মায়ের বুক ফাঁটা আর্তনাদ। কেবলই কাকতালীয়? কেবলই দুর্ঘটনা? এমনই এক প্রশ্নের জন্ম দেয় বোধ।
চলুন আজ আগানো যাক অভিনয়শিল্পীদের নাম ধরেই।গল্পের দেখা যায় রিটায়ার্ড বিচারক আফজাল হোসেন আলজেইমারে ভুগছেন। কিছুদিন ধরে এক ছেলেকে স্বপ্নে দেখছেন ঘুমাতে পারছেন না, দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, সেইসঙ্গে তার মৃত স্ত্রী যিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন তাকে নিয়েও স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু কেন? ওই ছেলেটি কে আর তার সঙ্গে তার স্ত্রীর মৃত্যুর কী সম্পর্ক। মেয়ে উকিল সারাহ বাবার অসুস্থতা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার বাবা কি তাহলে ভুল কোনো রায় দিয়েছিলেন? সেই অনুতপ্ততায় ভুগছেন নাকি ঘটনা ভিন্ন? সারাহ পুলিশ অফিসার সম্রাটকে নিয়ে লেগে পড়েন বাবার সমস্যার গোড়া খুঁজতে। তখনও তার জানা ছিল না, তার জন্য অপেক্ষা করছে এর থেকেও বড় এক সত্যের খোলাসা।
গল্পটা হয়ত আপনার কাছে এক্সট্রা অর্ডিনারি নাও লাগতে পারে, কারণ আপনি যদি ইংলিশ হিন্দী মিস্ট্রি ড্রামা সিরিজ সিনেমা দেখে থাকেন তাহলে শুরু থেকেই কিছুটা প্রেডিক্ট করতে পারবেন যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল, তবে বাংলা ওয়েবসিরিজে এমন গল্প দেখেননি। শুরুর দিকে কিছুটা স্লো বার্নিং মনে হলেও আপনাকে ধরে রাখতে বাধ্য। প্রতিটি ধাপে ধাপে পাপড়ির মতো এক একটি সত্য উন্মোচনের বিষয়টি বেশ এট্রাকটিভ। দর্শক হিসেবে আপনার জানতে ইচ্ছে করবে গল্পটা কি কেবলই একজন বিচারকের রহস্যময় অতীতের জট খোলার নাকি আমাদের নিত্যদিনের খবরের পাতার লুকানো কালো অধ্যায়? উত্তর খোঁজার দায়িত্ব আপনার।
ক্যামেরার কাজ, চিত্রনাট্য, স্টোরি টেলিং, মিস্ট্রি ধরে রাখা সবকিছুতেই দারুণ নিখুঁত কাজ করেছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা।
অভিনয়ে অসাধারণ ছিলেন শাহজাহান সম্রাট। পুলিশ অফিসার চরিত্রের কাঠিন্য এবং ইন্টিলিজেন্স সেইসঙ্গে কিছুটা সার্কাজম খুব সফলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই অভিনেতা। সারাহ আলমকেও দারুণ মানিয়েছে তার চরিত্রে। তার কথা বলার ভঙ্গি, এক্সপ্রেশন, বডি ল্যাংগুয়েজ ভালো লেগেছে অনেক। রওনাক হাসান আর রুনা খানের কাজ আমার আগাগোড়ায় খুব ভালো লাগে এখানেও ব্যতিক্রম হয়নি। দুর্দান্ত। রওনাক যতক্ষণ ছিলেন স্ক্রিনে হি ওনড দ্য শো। চেষ্টা করেছেন খায়রুল বাসারও তার অভিনয় এক্সেন্ট দারুণ মানানসি ছিল। তবে স্পর্শিয়া কিছুটা হতাশ করেছেন আর তাছাড়া সৈয়দ বাবু আর রুনা খান ওদিকে সম্রাট আর সারাহর কেমিস্ট্রি যেমন দারুণ জমেছিল খায়রুল বাসার আর স্পর্শিয়ার টা জমেনি কিন্তু ওটাই বেশি দরকার ছিল। আফজাল হোসেন এবং সৈয়দ বাবু একই চরিত্রের দুই আলাদা বয়সে মানানসই ছিলেন।
সবশেষ বলতে চাই, এন্টারটেইনিং একটা সিরিজ বোধ। শুরু করলে আপনাকে শেষ করতেই হবে। তাই খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে না বসে দেখে ফেলুন, ধরা দিতেই পারে চমৎকার কিছু। আর যারা দেখেছেন তারা অপেক্ষা করুন সিজন টুর জন্য।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন