মৌলভীবজার প্রতিনিধি\ নতুন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে যেন মূখরিত মৌলভীবাজার জেলার চারিপাশ। কেউ ধান কর্তন করছেন। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি আমন মৌসুমে আনুষ্ঠানিক ভাবে খামার যান্ত্রিকী করণের মাধ্যমে একই জমিতে রোপা আমন ধান রোপনের পর কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কর্তন শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে যান্ত্রিক নির্ভর হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। অনেকেই সময়তো সোনালী ফসল ধান ঘরে তুলতে পারেনা । এতে অনেক জমিতে ধান ঝরে গিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থের পাশাপাশি হতাশায় থাকেন। রোপন ও কর্তন যান্ত্রিক হওয়ায় কম খরচে কৃষকরা ফলন ভালো পাচ্ছেন। গতকাল (২৪ নভেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকায় জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ও পাতাকুঁড়ি এগ্রোর সহযোগীতায় খামার যান্ত্রিকী করণের আওতায় রোপা আমন ধানের চারা রোপন ও কর্তনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ লক্ষে মাঠে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান,বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সুব্রত কুমার দত্ত, স্থানীয় কৃষি যান্ত্রিকী করণ খামার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন সহ অন্যন্যরা । অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন সদও উপজেলার উপ সহকারী কৃষি অফিসার নিরোজ কান্তি রায়, স্থানীয় কৃষক বাচ্চু মিয়া,রাজু আহমদ। প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান পুষ্পমাল্যের সাজানো ফিতা কেটে আমন ধান কর্তনের উদ্বোধন করেন। শেষে তিনি যান্ত্রিক ভাবে উৎপাদিত মাঠের ফসল কম্বাইন হারভেস্টার চালিয়ে কর্তন কওে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের উদ্বোধন করেন । খামার যান্ত্রিকী করণের উদ্যেক্তা সৈয়দ উমেদ আলী বলেন, এ বছর ১২৩ বিগা জমিতে হাইব্রিড ও ব্রি ৭৫ জাতের ধান চাষ করেছেন । এর মধ্যে ৮৩ বিগা জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপন করেন এবং ওই জমিতে ধান কর্তন করছেন কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্র দিয়ে। ধান কাটা,মাড়াই ও ঝাড়াই এক সাথে হয়ে যায়। যে কারনে শ্রমিক কম লাগে। এতে খরছ কমে যায়। শ্রমিক সঙ্কট প্রতি বছরই লেগে থাকে যেকারণে আমরা যন্ত্রের উপর পরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পরেছি। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার,পাওয়ার টিলার, শেলো পাম্পসহ সবকিছুই ডিজেলের উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি ধানের মূল্য যদি আরেকটু বৃদ্ধি করা হয় তাহলে কৃষক উপকৃত হবে এবং কৃষকের আগ্রহ বাড়বে। তিনি আরও জানান,হাইব্রিড ধান বিজে ফলন ভালো হয়, তবে প্রতি কেজি বিজ ক্রয়করতে হয় ৩‘শ টাকা থেকে ৪৩০ টাকা দিয়ে। বিএডিসি থেকে বিজ ক্রয় করলে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি বিজের মূল্য। তিনি সরকারি ভাবে হাইব্রিড বিজ উৎপাদন ও কৃষক পর্যায়ে কমমূল্যে বিতরণ করলে উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে। স্থানীয় কৃষি যান্ত্রিকী করণ খামার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন জানান, যান্ত্রিকী করণের কারণে খরচ কমে গেছে, জমিতে ফলন ভালো হচ্ছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে কমবয়সী চারা রোপন করা যায়। এতে করে ফলনও ভালো হয়। আগে যে জমিতে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৬মন ধান পাওয়া যেত, ওই সব জমিতে ২২ থেকে ২৪ মন ধান এখন পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যে জমিতে ধান কাটছি, সে জমিতেই মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করেছি। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কর্তন করছি, সেটি ব্যবহারে উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ জানান, এ বছর বিভিন্ন জাতের ব্রি-ধান ও হাইব্রিড ধান কৃষকরা চাষাবাদ করেছেন। আমন ধান চাষে এ বছর অনুকুল পরিবেশ ও পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রতি বছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষীরা খুশি। জেলায় আমন ধানের চাষাবাদের জমির পরিমানের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১ লক্ষ ১ হাজার ৪ শত হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ১ হাজার ৬ শত হেক্টর পরিমাণ জমি। যার সম্বাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ আশা করছে এবছর ৩ লক্ষ মেট্রিক টনের উপরে উৎপাদন হবে। ছবি ক্যাপশন: জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান যান্ত্রিক ভাবে উৎপাদিত মাঠের ফসল কম্বাইন হারভেস্টার চালিয়ে কর্তন কওে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের উদ্বোধন করেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন