যুক্তরাজ্যের কারি শিল্পে বাংলাদেশিদের সাফল্য

gbn

জিবিনিউজ24ডেস্ক// 

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে দারুণ অবদান রেখে আসছে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। দিন দিন এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে দক্ষ কর্মীর সংকট এই শিল্পের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এজন্য অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ব্রেক্সিট ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বর্তমানে এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরমধ্যেও অবদান রেখে যাচ্ছে এই শিল্পটি। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের।

তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে রয়েছে। এতে ৭৫ হাজার মানুষ কাজ করছে। যার প্রায় ৯৫ ভাগই বাংলাদেশি। যা থেকে প্রতি বছর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন পাউন্ড অবদান রাখছে। প্রতিবছর যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশিদের এই শিল্প থেকে এ পরিমাণ অর্থ ট্যাক্স হিসেবে গ্রহণ করছে। একারণেই যুক্তরাজ্যের চতুর্থ বৃহৎ শিল্প হিসেবে রূপ পেয়েছে বাংলাদেশিদের এই ব্যবসা।  তবে স্টাফ সংকটসহ নানা কারণে এরই মধ্যে প্রায় ৩ হাজার রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়েছে।

এদিকে করোনার ঢেউ সামলিয়ে উঠতে না উঠতেই যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে হানা দিয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফলে বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে কয়েকগুণ। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবও পড়ছে কারি শিল্পে। এর সঙ্গে দক্ষ কর্মী ও শেফ না পাওয়ায় অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নতুন করে ব্যবসা চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেও পারছেন না।

ব্রিটেনের ইয়র্ক শহরে একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ছিল সিলেটের বাসিন্দা নাজমুল আশরাফের। তিন বছর ধরে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি যথেষ্ট লাভ জনকও ছিল। কিন্তু সম্প্রতি স্টাফ সংকট দেখা দেওয়ায় তা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। 

নাজমুল বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের কোনও সমস্যা ছিল না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও আমি ব্যবসায় লাভজনক ছিলাম। কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে কর্মী সংকটের। কর্মী না পাওয়ায় ব্যবসা এখন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। সরকার যেসব শর্ত দিয়েছে তা পূরণ করে দেশ থেকে কর্মী আনা সম্ভব নয়।

যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশটিতে বর্তমানে তিন লাখ কর্মী সংকট রয়েছে। এ কারণে অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার চিন্তা ভাবনা করছেন। যার সুযোগ নিচ্ছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো।

বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন-ইউকের সিনিয়র সহ-সভাপতি অলি খান (এমবিই) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ১০ হাজার রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়ে রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিলে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে দিন যতই যাচ্ছে, ততই রেস্টুরেন্ট শিল্পে শেফ ও স্টাফ সংকট বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক সংকট রয়েছে। হোম অফিসের নানা জটিল শর্তের কারণে নতুন করে স্টাফ আনা যাচ্ছে না। তাই স্টাফ সংকটের কারণে করোনাকালে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়।  শ্রমিক স্বল্পতার কারণে সঠিক সার্ভিসও দেওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সব কিছুর দাম ২০০-৩০০ শতাংশ বেড়েছে। আগে যেখানে ২০ লিটার তেলের দাম ছিল ১৫ পাউন্ড এখন সেটি ৫২ পাউন্ডে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যে চিকেনের দাম ছিল ৩০ পাউন্ড সেটি এখন ৬০ পাউন্ড হয়ে গেছে। ফলে ব্যবসা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রির (সিবিআই) সভাপতি টনি ডাঙ্কার বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত এক কনফারেন্সে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, কারি শিল্পকে বাঁচাতে হলে এই শিল্পে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক আমদানির অনুমোদন দিতে হবে। যদিও যুক্তরাজ্য সরকার দেশটিতে অভিবাসী ঠেকাতে নীতির পরিবর্তন করছে না। সিবিআই সভাপতি এই আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছেন অলি খান।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোতে বাংলা খাবারের পাশাপাশি থাই, চায়নিজ, ইন্ডিয়ান, ইতালীয়সহ বিভিন্ন দেশের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ এখন বাংলা খাবারে ঝুঁকছেন। ইংলিশ ইউরোপীয়দের অনেক আগে থেকেই পছন্দের খাবার তালিকায় বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। তাছাড়া গত ৩০ বছর ধরে ইন্ডিয়ান রেসিপি চিকেন টিক্কা মাসালা এখন ব্রিটিশদের খাবারের মধ্যে প্রথম পছন্দে চলে এসেছে। তারা প্রতিনিয়ত সপরিবারে এসে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে খাবার খাচ্ছেন। 

জানা যায়, কর্মী নিয়োগে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকার বেশ কিছু কঠিন শর্ত রয়েছে। কোনও স্টাফকে ন্যূনতম ৩০ হাজার পাউন্ড বার্ষিক বেতন দিতে হবে। এছাড়া কর্মীর থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে জানতে হবে ইংরেজিও। চুক্তির মেয়াদ রাখতে হবে তিন বছর। 

রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে একজন অদক্ষ স্টাফকে এসব শর্ত মেনে আনলে তাতে ব্যবসা পোষানো যায় না। তাই ব্রিটিশ সরকার যদি একটু শর্ত শিথিল করে দেয়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে আরও কিছু কর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। নইলে দিন দিন আরও হুমকিতে পড়বে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। এতে ব্রিটিশ সরকারেরও রাজস্ব কমবে।

gbn

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন