জিবি নিউজ ||
লন্ডন, ২৯ নভেম্বর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কারির সুনাম ছড়িয়ে দিতে ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ডস’ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন নিউইয়র্কের খ্যাতিমান শেফ মোঃ খলিলুর রহমান। ২৯ নভেম্বর পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্তোরায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশিরা ভালো করছে। পিছিয়ে নেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ও। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাংলাদেশিদের শত শত রেস্টুরেন্ট আছে। এসব রেস্টুরেন্টগুলোর সুনামকে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় তুলে ধরার জন্য আয়োজন করা হবে ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ডস’। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত হবে এ আয়োজনের প্রথম আসর।
খলিলুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বাংলাদেশি কারি হাউজ থাকলেও সেগুলো এখনো সংগঠনিক ভিত্তি পায়নি। কারি ব্যবসায়ীদেয় অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য কোনো এওয়ার্ডস এখনো নেই। যুক্তরাষ্ট্রের কারি ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ করে একটি শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলতে এবং এসব ব্যবসায়ীদের মূখপত্র হিসেবে ভূমিকা রাখতেই কাজ করবে ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ডস’।
মাস্টার শেফ মোঃ খলিলুর রহমান নিউইয়র্কের স্বনামধন্য খলিল বিরিয়ানি হাউজের স্বত্বাধিকারী ও সিইও। খলিল বিরিয়ানি হাউজ নিউ ইয়র্ক তথা পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত খাবারের ব্র্যান্ড। যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যরসিকদের কাছে মোস্ট ফেভারেট প্লেসে পরিণত হয়েছে। শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেই নয়, স্থানীয় আমেরিকানসহ বিশে^র নানান জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ এই বাংলাদেশি রেস্তোরায় রসনা বিলাসে আসে। সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন খাবার এবং অনন্য গ্রাহক সেবার পাশাপাশি জনসেবামূলক কাজের জন্য শেখ মোঃ খলিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অন্যতম বেসামরিক পুরস্কার মর্যাদাপূর্ণ ‘প্রেসিডেন্সিয়াল লাইফ টাইম এওয়ার্ডস’ পেয়েছেন। গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যে কারি অস্কার খ্যাত ‘ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডস’ও লাভ করে খলিল বিরিয়ানি হাউজ। মূলত এই এওয়ার্ডস গ্রহণের জন্য পুরো টিম নিয়ে লন্ডনে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারি হাউজের অন্যতম প্রমোটার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শেফ মোঃ খলিলুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে খলিলুর রহমান বলেন, “যুক্তরাজ্যের কারি ইন্ডাস্ট্রি বিশ^ব্যাপী খ্যাত। লন্ডন হলো বিশে^র কারি ক্যাপিটাল। এখানকার ‘ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডস’সহ অন্যান্য কারি এওয়ার্ডসগুলো বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। সেকারণেই ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ডস’ আয়োজনের ঘোষণা দেয়ার জন্য লন্ডনের চাইতে উপযুক্ত স্থান আর কোনোটি নয়।”
এতে আরো বলা হয়, আয়োজনগত দিক দিয়ে ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ডস’ অনেকটা যুক্তরাজ্যের কারি এওয়ার্ডসগুলোর মত হবে। তবে কিছু কিছু জায়গায় পার্থক্য থাকবে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে আয়োজনের ব্যাপ্তির জায়গায়। যুক্তরাজ্যের কারি এওয়ার্ডসগুলো মূলত ইউকে বেইজড। শুধু বৃটেনের রন্ধনশিল্পীরা এতে অংশ নেন। কিন্ত ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ডস’ হবে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড। বিশে^র যেকোনো প্রান্তের রন্ধনশিল্পের জন্য এই আয়োজন উন্মুক্ত থাকবে। ১২ থেকে ১৫টি ক্যাটাগরিতে দেয়া হবে ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ডস’।
খলিলুর রহমান বলেন, “খাবার একটি দেশের সংস্কৃতির অংশ। খাবারকে বলা হয় ক‘কালচারাল এম্বাসেডর’। তাই ফুড কালচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের খাবার এবং সংস্কৃতিকে আমরা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই। একইসঙ্গে আমরা নিজেরাও পরিচিত হতে চাই বিশ্বের নানা প্রান্তের বৈচিত্র্যময় নানান খাবারের সঙ্গে। ‘আমেরিকান কারি এওয়ার্ডস’ প্ল্যাটফর্মটি বিশ্বের বৈচিত্র্যময় খাবার ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাবে।”
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান জানান, মাত্র ৫ বছরের কিছু বেশ সময় আগে ২০১৭ সালে নিউ ইয়র্কে খলিল বিরিয়ানি হাউজ যাত্রা শুরু করে। খাদ্যপ্রেমী ও গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান পছন্দের ধারাবাহিকতায় খলিল বিরিয়ানি হাউজের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে একে একে যাত্রা শুরু করে খলিল হালাল চায়নিজ, খলিল সুইটস অ্যান্ড বেকারি এবং আমেরিকান ফাস্টফুড খলিল পিৎজা এন্ড গ্রীল। সাম্প্রতিককালে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নামানুসারে ‘বাইডেন বিরিয়ানি’ নামে নতুন একটি ডিশ চালু করেছন। ব্যতিক্রমী এই ডিশটি আমেরিকায় বেশ আলোচিত হয়েছে এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্স-মাস্টার্স করা খলিলুর রহমান বলেন, ‘মানুষকে সুস্বাদু এবং ভালো খাবার পরিবেশনের নেশা থেকেই আমি এই পেশায় এসেছি। আমার হয়তো অন্য পেশায় যাবার কথা ছিল। কিন্তু নেশা এবং নিয়তি আমাকে বানিয়েছে শেফ।’
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন সাপ্তাহিক জনমতের সহ সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন আহমদ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজনেস আমেরিকা ম্যাগাজিনের ম্যানেজিং এডিটর এনামুল হক এনাম। সাপ্তাহিক জনমতের সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি হাবিব রহমান, এসই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মোহাম্মদ ইয়াওর প্রমুখ।

মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন