দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পিছিয়ে পড়া মানুষদের বড় চ্যালেঞ্জ

জিবিনিউজ24ডেস্ক//  

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পিছিয়ে পড়া মানুষের জনজীবনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। আয় বাড়ছে কিন্তু তার মধ্যে অসমতা বিদ্যমান এবং সব মানুষের কাছে এ উন্নয়নের ধারা সমানভাবে যাচ্ছে না।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘জনশুনানি : জাতীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

জনশুনানিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতাধিক নাগরিক, বিশেষত সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এ জন শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। এই জন শুনানির উদ্দেশ্য ছিল সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের নীতিগত প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় স্তরে তাদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরা।

অনুষ্ঠানে  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের আইন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, জাতীয় সংসদের আইন এবং বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি স্থায়ী সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

শুনানিতে উপস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আসা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক ব্যক্তি বলেন, কাওকে পিছিয়ে রেখে বাংলাদেশ অগ্রসর হতে পারবে না। 

দলিত এবং হরিজন সমাজের একজন প্রতিনিধি বলেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়াতে হরিজন সম্প্রদায়ের শিশুদের স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয় না। 

চা-কন্যা-নারী সংগঠনের সভাপতি খায়রুন আক্তার বলেন, রোহিঙ্গাদেরকেও ভূমির অধিকার দেওয়া হয় কিন্তু চা শ্রমিকদের দেওয়া হয় না। তিনি বলেন ‘আমরা নিজ ভূমিতে পরবাসী’। 

উপস্থিত ট্রান্সজেন্ডার একজন বলেন যে, সরকার থেকে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হলেও তাদের উপার্জনের একমাত্র উপায় ভিক্ষাবৃত্তি। তাদের ভোটাধিকার দেয়া হলেও তাদের জন্য আলাদা কোনো লিঙ্গ নেই। নারী অথবা পুরুষ ছাড়া আর কেউ ভোটার আইডি করতে পারে না।

উপস্থিত একজন পোশাক শ্রমিক বলেন, শুধু রাস্তা ও ব্রিজ করলেই উন্নয়ন হয় না। এ দেশে এখনো মজুরি আন্দোলন হয় কারণ উন্নয়ন সবটাই পুঁজিবাদীদের পক্ষে যায়, গরীব শ্রমিকদের পক্ষে নয়। আগে ৮০ শতাংশ নারী পোশাক শিল্পে ছিল। কিন্তু তা এখন কমে ৬৫ শতাংশে নেমে গেছে।

প্রতিবন্ধী একজন শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয়ের অভাব রয়েছে বিশেষ করে ঢাকার বাইরে। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা এবং প্রযুক্তিতে অগ্রসর না করলে তাদের পক্ষে এগিয়ে যাওয়াটা সম্ভব নয়। 

ময়মনসিংহ থেকে আসা গারো সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি বলেন, বর্তমানে শেরপুর ও মধুপুর ইত্যাদি অঞ্চলে উন্নয়নের নামে, ইকো-পার্কের নামে গারোদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। উন্নয়নের অন্তরালে আদিবাসীদের কান্না জড়িয়ে যাচ্ছে। 

রংপুরের একজন প্রতিনিধি বলেন, সাংবাদিকদের জন্য উপজেলা পর্যায়ে যে প্রণোদনা যায় তা মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকরা পায় না। এছাড়াও গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের বেতন বকেয়া থাকে, অথচ সাংবাদিকদের নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। 

সম্মেলনে সঞ্চালনায় ছিলেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি, বলেন বাংলাদেশ ক্রমাগতই উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোতে উন্নয়ন হলেও জনগণ এ উন্নয়নের কতটুকু ভাগীদার হয়েছে? এছাড়া যুবসমাজের ক্ষেত্রে শোভন কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি পিছিয়ে পড়া মানুষের জনজীবনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। 

মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ২১০০ ডলার। প্রযুক্তি খাতে সংযোগ বেড়েছে যার ফলে স্থানীয় মানুষের কথা বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। শিক্ষার হার প্রায় ৬০ শতাংশ থেকে আজ প্রায় ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্বলতা থাকলেও ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক শুরু করেন।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমরা দেশ হিসেবে অনেক এগিয়ে যাচ্ছি। সরকার ও জনগণ আলাদা নয়। দায়িত্ব শুধু জনপ্রতিনিধিদের নয়, সরকারের নয়, কাজ করতে হবে সবাই মিলে, একসঙ্গে গড়ে তুলতে হবে সুন্দর সোনার বাংলাদেশ। 

সম্মেলনের সভাপতি প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেন, স্থানীয় আলোচনা এবং জাতীয় আলোচনার মধ্যে সবসময় একটি পার্থক্য থাকে। মাঠ থেকে যে আলোচনা আসে তার সঙ্গে বড় পর্যায়ের আলোচনার সাদৃশ্য থাকে না। তিনি মনে করেন, মাঠ থেকে কথা তুলে আনার দায়িত্ব সরকারের। বছরের পর বছরের একই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে কিন্তু এর সমাধান হচ্ছে না কেন সেদিকে নজর দিতে হবে। 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন