সৈয়দ নাজমুল হাসান, ঢাকা ||
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে প্রাচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলন করে আর সাদা পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
আজ মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন৷ আর ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ সকল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা৷
পরে পায়রা অবমুক্ত করে ছাত্রলীগের ৩০ তম জাতীয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভিভাবক শেখ হাসিনা৷ এসময় ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়৷
এরপর জাতীয় সম্মেলন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অসীম কুমার বৈদ্য ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম সুমন প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেন৷ এরপর ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত পরিবেশন ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধনের মনোমুগ্ধকর একক সংগীতের মুছনায় সম্মেলনস্থল হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মনোমুগ্ধকর সংগীত শুনে আরেকটি গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব পাবে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে প্রাচীন এই ছাত্র সংগঠন৷ সাংগঠনিক নেত্রী' শেখ হাসিনাই পরবর্তী শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়৷
এ আয়োজন ঘিরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ৷ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে সুবিশাল নৌকার আদলে৷ রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কের পাশে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ছাত্রলীগের পতাকা দিয়েও সাজানো হয়েছে৷
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিটের পাশাপাশি সারা দেশের জেলা মহানগর, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভোর থেকেই দলে দলে জড়ো হন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে৷ তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নাম ও ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড৷
এদিকে, ছাত্রলীগের ৩০ তম সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকার রাস্তা বন্ধ রাখার পাশাপাশি রোড ডাইভারশন দেওয়া হয়। সম্মেলন উপলক্ষে ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। যানজট পরিহারের জন্য রাজধানীর কাটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাবি মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ঢাবি ভাস্কর্য ক্রসিং, উপাচার্য ভবন ক্রসিং এলাকায় সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাফিক ডাইভারশন চলে।
সকালে টিএসসি, রমনা কালী মন্দির গেট, দোয়েল চত্বরেও দেখা যায় আনন্দমুখর পরিবেশ৷ নানা রঙের পোশাক আর টুপি পরে, বাদ্য বাজিয়ে সম্মেলনে আসেন ছাত্রলীগ কর্মীরা৷ 'ছাত্রলীগের সম্মেলন' সফল হোক সফল হোক' স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা৷ ছাত্রলীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে৷ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয়েছিল ওই সম্মেলন৷
এর আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি চূড়ান্ত করেন শেখ হাসিনা৷পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা শোভন ও রাব্বানীকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রথম সহ-সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে৷ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য৷
পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের ভারমুক্ত করে সভাপতি ও সাধারাণ সম্পাদক করা হয়৷ এর আগে সম্মেলনের এক বছর পর ২০১৯ সালের ৩১ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়৷
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন