ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র মানে সব বাজি শেষ: সৌদি আরব

 জিবিনিউজ24ডেস্ক//  

দীর্ঘদিন ধরেই ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্কে বৈরিতা চলছে। এরপরও উত্তেজনা ও বৈরিতাকে পাশে রেখে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চায় দুই দেশ। কিন্তু এর মধ্যেই ইরানের পরমাণু অস্ত্র অর্জন নিয়ে বেশ চিন্তায় সৌদি আরব।

দেশটি বলছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করলে ‘সব বাজি শেষ’ হয়ে যাবে। রোববার (১১ ডিসেম্বর) দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে তাহলে ইরানের উপসাগরীয় আরব প্রতিবেশীরা তাদের নিরাপত্তা জোরদার করতে কাজ করবে বলে রোববার মন্তব্য করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ।

২০১৫ সালে বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। এর ফলে পামাণবিক বোমা প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম মজুতের ক্ষেত্রে রাশ টানতে বাধ্য হয় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রুহানির প্রশাসন। এছাড়া ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করে, সে দিকেও নজর রাখে জাতিসংঘ।

কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল টানাপোড়েন শুরু হয়।

এমনকি সম্প্রতি জাতিসংঘের পরমাণু প্রধান তেহরানের সাম্প্রতিক ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, দেশটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষমতা বাড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে ওয়ার্ল্ড পলিসি কনফারেন্সে একটি সাক্ষাৎকার দেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল। ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে; এমন দৃশ্যপটের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ইরান যদি একটি অপারেশনাল পারমাণবিক অস্ত্র পেয়েই যায়, তাহলে সব বাজি শেষ হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই অঞ্চলে খুব বিপজ্জনক জায়গায় আছি... আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলো অবশ্যই তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে নজর দেবে, আপনি এটা প্রত্যাশা করতেই পারেন।’

অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালের সেই চুক্তি থেকে বের হয়ে গেলেও ২০২১ সালের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে ওয়াশিংটন ফের এই চুক্তিতে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর থেকে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হলেও তেহরানের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক দাবি উত্থাপনের অভিযোগ এনে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সংলাপ বর্তমানে কার্যত স্থগিত রয়েছে।

এছাড়া ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা চলছে এবং এর পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঐতিহাসিক সেই পরমাণু চুক্তি ইস্যু থেকে বৈশ্বিক মনোনিবেশ অনেকটাই সরে গেছে।

এছাড়া রিয়াদ ইরানের পারমাণবিক চুক্তি সম্পর্কে এখনও ‘সন্দিহান’। প্রিন্স ফয়সাল বলেছেন, তেহরানের সঙ্গে একটি শক্তিশালী চুক্তির জন্য তারা এটাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

মূলত সুন্নি-শাসিত উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো একটি শক্তিশালী চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে যা শিয়া-শাসিত ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন কর্মসূচিসহ আঞ্চলিক প্রক্সি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তাদের উদ্বেগের সমাধান করবে।

প্রিন্স ফয়সাল বলছেন, ‘এই মুহূর্তে লক্ষণগুলো দুর্ভাগ্যক্রমে খুব ইতিবাচক নয়।’

তার ভাষায়, ‘আমরা ইরানিদের কাছ থেকে শুনেছি যে, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে কোনো আগ্রহ নেই, এটা বিশ্বাস করতে পারা খুবই স্বস্তিদায়ক হবে। তবে আমাদের সেই স্তরে আরও আশ্বাস দরকার।’

অবশ্য ইরান বরাবরই বলেছে, তাদের পারমাণবিক প্রযুক্তি শুধুমাত্র বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালনা করা হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন