ব্রাসেলসয়ে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস উপলক্ষে নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক সম্মেলন

বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবিতে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সর্বইউরোপীয় শাখার উদ্যোগে গত ৮ ডিসেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর বেলজিয়ামের ব্রাসেলস-এ মানববন্ধন ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ পনেরটি দেশের আইনপ্রণেতা, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, মানবাধিকার ও শান্তি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্মূল কমিটির নেতাকর্মীরা এই সম্মেলনে যোগ দেন।

 

৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সকাল দশটা থেকে সাড়ে বারটা পর্যন্ত ব্রাসেলস-এ ইউরোপীয় কমিশনের সামনে ব্যানার ও ফেস্টুনসহ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন, যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ল্ড সিন্ধি কংগ্রেস-এর সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা ড. লাকুমাল লুহানা, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিটি তুরস্ক-এর সভাপতি লেখক চলচ্চিত্রনির্মাতা ফেরহাত আতিক, বেলুচ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল-এর নির্বাহী সভাপতি যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার নেতা লেখক ড. নাসির দাস্তি, পোল্যান্ডের নেভার এগেইন-এর সভাপতি সমাজবিজ্ঞানী ড. রাফাল প্যানকোভস্কি, পোল্যান্ডের নেভার এগেইন-এর সদস্য মানবাধিকার নেতা নাটালিয়া সিনায়েভা পাঙ্কোভস্কা, জার্মানিতে নির্বাসিত আফগান মানবাধিকারকর্মী আরিয়া সুরিয়া, বেলজিয়ামের মানবাধিকার নেতা অ্যান্ডি ভার্মাট, উজবেকিস্তানের মানবাধিকার নেতা বেকজোডজন ইউলচিয়েভ, উজবেকিস্তানের মানবাধিকার নেতা ফায়জুলো নেমাতোভ, বুরুন্ডির সমাজকর্মী আমিসা এনতাকিরুতিমান, রুয়ান্ডার মানবাধিকার নেতা অ্যান্ড্রু রুবানজাঙ্গাবো, প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর পুত্র মানবাধিকার কর্মী আসিফ মুনির তন্ময়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ড. আলিম চৌধুরীর কন্যা অধ্যাপক ড. নুজহাত চৌধুরী, সুইডেনে বসবাসরত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সমাজসেবক নূতন চন্দ্র সিংহের নাতনি শিল্পী চৌধুরী, নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলসহ নির্মূল কমিটির সর্বইউরোপীয় শাখা ও সংগঠনের বিভিন্ন দেশের শতাধিক নেতৃবৃন্দ।

 

সমাবেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন-এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘গিনেজ বুকস অফ রেকর্ডে বাংলাদেশের গণহত্যাকে বিংশ শতাব্দীতে গণহত্যার শীর্ষ পাঁচটির মধ্যে একটি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এডওয়ার্ড কেনেডি পূর্ব বাংলার গণহত্যাকে সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্নগুলির একটি হিসেবে গণ্য করেছেন। গণহত্যার ইতিহাসে ভয়াবহতা ও নৃশংসতার দিক থেকে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা দ্বিতীয় বা এর কাছাকাছি বলে নিউজউইক উল্লেখ করেছে। মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড এই পরিস্থিতিকে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ এবং ‘সহিংসতার অব্যাহত বেলেল্লাপনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মানুষ জাতিগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে আলাদা। সুতরাং বাঙালির উপর পাকিস্তানের সংঘটিত নৃশংসতা অবশ্যই ১৯৪৮ সালের কনভেনশনে উল্লেখ করা গণহত্যার শামিল। সুতরাং বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের আকুতি, ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একাত্তরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংগঠিত গণহত্যার নৃশংসতা ও ভয়াবহতাকে পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি প্রদান করুন।’

 

এরপর স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় ব্রাসেলস-এর বায়তুল মুজিব মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্ব সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন দেশ থেকে আশা আন্তর্জাতিক অতিথি সহ মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশিয় গণসম্মিলন-এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অধ্যাপক মুনির চৌধুরীর পুত্র মানবাধিকারকর্মী আসিফ মুনীর তন্ময়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ড. আলিম চৌধুরীর কন্যা অধ্যাপক ড. নুজহাত চৌধুরী, সর্ব ইউরোপিয়ান কমিটির সভাপতি তরুণ কান্তি চৌধুরী, সর্ব ইউরোপিয়ান কমিটির সম্পাদক আনসার আহমেদ উল্লাহ, সুইডেনে বসবাসরত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জনহিতৈষী নূতন চন্দ্র সিংহের নাতনি সুইডিশ নির্মূল কমিটির সংষ্কৃতিক সম্পাদক  শিল্পী চৌধুরী, বেলজিয়ান নির্মূল কমিটির হুমায়ুন মাকসুদ হিমু, যুক্তরাজ্য নির্মূল কমিটির সভাপতি সৈয়দ আনাস পাশা, যুক্তরাজ্য নির্মূল কমিটির সম্পাদক স্মৃতি আজাদ, ফরাসি নির্মূল কমিটির উদয়ন বড়ুয়া, সুইস নির্মূল কমিটির নজরুল ইস্মা জমাদার,  সত্যবাণী ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দা ফেরদৌসী পাশা কলি  সহ নির্মূল কমিটির সর্বইউরোপীয় শাখা ও সংগঠনের বিভিন্ন দেশের শতাধিক নেতৃবৃন্দ।  সম্মেলন শেষে বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর শাহরিয়ার কবির নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ভয়েস অব কনসিয়েন্স’ প্রদর্শিত হয়।

 

৯ ডিসেম্বর ব্রুসেলস প্রেস ক্লাবে ৫৫টি দেশের প্রায় দুই শতাধিক বিশিষ্ট নাগরিক স্বাক্ষরিত ‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে ইউরোপীয় কমিশনে জমা দেওয়া স্মারকলিপি  সাবেক এমইপির পাওলো কাসাকার সভাপতিত্বে  পাঠ করা হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয় আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে আগত গণহত্যার ভুক্তভোগী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণহত্যাবিরোধী প্রচারক, মানবাধিকারকর্মী এবং শান্তিকর্মীরা ব্রাসেলসে এক সম্মেলনে সমবেত হয়ে দাবি জানাচ্ছি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে হবে,  আজকের এই শুভ সমাবেশ থেকে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন সারা বিশ্বের বিভিন্ন শাসক ও গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত সকল গণহত্যার নিন্দাজ্ঞাপন করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন