মোঃ নাসির, বিশেষ প্রতিনিধি :ভারতের প্রায়ত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সাথে আমার চাকরির নিশ্চয়তার ব্যাপারে কোনো কথোপকথন হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেল থেকে মুক্তি পেলে আমাকে চাকরিচ্যুত করার আশঙ্কা করছি। প্রণোব মুখার্জি আমাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর আমাকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। এই কথাগুলো সত্য নয় এবং এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান বর্তমানে আমেরিকায় বসবাসকারী এবং চিকিৎসাধীন মইন ইউ আহমেদ। মইন ইউ আহমেদ তার প্রতিবাদলিপিতে বলেন, প্রণব মুখার্জি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে ‘THE COALITION YEARS’ নামে একটি বই লিখেছেন। বইটিতে বাংলাদেশ সমন্ধে একটি অধ্যায় রয়েছে, যেখানে আমার ভারত সফরের সময়কালীন তাঁর সাথে আমার সৌজন্য সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েছেন ঐ বইয়ের ১১৪ পৃষ্ঠার তৃতীয় প্যারায়। তিনি লিখেছেনÑ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন। প্রতি উত্তরে আমি নাকি বলেছি যে শেখ হাসিনা মুক্তি পেলে আমাকে চাকরিচ্যুত করার আশঙ্কা করছি। তিনি আরো লিখেছেন যে, তিনি নিজে দায়িত্ব নিচ্ছেন এবং নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর আমাকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, এই ধরনের কোনো কথাই উনার সাথে আমার হয়নি। আমি একটি স্বাধীন দেশের সেনাপ্রধান, আর তিনি ভারতের বৈদেশিক মন্ত্রী (তৎকালীন সময়ে)। তাঁর কাছে আমার চাকরির নিশ্চয়তা চাইবার প্রশ্নই ওঠে না। কোনো সেনাবাহিনী তার সৈনিকদেরকে নতজানু হয়ে বা মাথা নিচু করে নিজ স্বার্থ অর্জনের শিক্ষা দেয় না। আমিও এমন শিক্ষা পাইনি। তিনি আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরপরই ঘোষণা দিয়েছিলে যে দুই বছরের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টির কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হবে। সেই অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। এ জন্য কোনো দেশ বা পাশ্চবর্তী রাষ্ট্র হতে কোনো প্রকার সাহায্য বা সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। প্রণব মুখার্জি কি জানতেন কে নির্বাচনে জয়ী হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেনাবাহিনীর সহায়তায় জাতিকে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়েছে যা দেশে এবং বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। জেনারেল ম. ইউ আহমেদ বলেন, ভারতীয় সেনাপ্রধানের আমন্ত্রণে ২০০৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সাত দিনের সফরে আমি ও আমার দল ভারত যাই। আমার এ সফর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক বিশ্লেষণ হয়েছে; কিন্তু আমি জানি আমি কেন গিয়েছিলাম। আমার ভারত সফরের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল দেশের জন্য প্রতিশ্রুত চাল রপ্তানিতে ভারতকে রাজি করানো। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে পরপর দু’দফা ভয়াবহ বন্যা, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর খাদ্যশস্যেও স্বল্প উৎপাদন বাংলাদেশকে তীব্র খাদ্য সংকটে ফেলে দেয়। ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া ছাড়া কোনো দেশের কাছে চাল উদ্ধৃত ছিল না। কিন্তু সংকটের মুখে দেশগুলি চাল রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরপ করে। জনাব মুখার্জির সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় আমার একমাত্র চাওয়া ছিল পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন চাল রপ্তানির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা, আর কিছু নয়। আমি এ বিষয়ে আমার লিখা ’শান্তির স্বপ্নে’ বাইয়ে উল্লেখ করেছি। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষে তিনি আমার সাথে একান্ত কথা বলতে চান এবং আমিও রাজি হই। একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রণব মুখার্জি দু’টি প্রশ্ন উপস্থাপন করেন। প্রথম প্রশ্ন : বাংলাদেশে কবে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে? এবং রাজবন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে কি না? প্রতিউত্তরে আমি বলি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার তাই করবে। দ্বিতীয় প্রশ্ন : ঢাকা-কলকাতা ট্রেন কেন শুরু হচ্ছে না? আমি বললাম, বাংলাদেশের পত্রিকায় পড়েছি ঢাকা থেকে আসা ট্রেনটি সম্পূর্ণ কাটা তারে ঘেরা (উপরে এবং চার পাশে) একটি খাঁচার মধ্যে প্রবেশ করান হবে। নিরাপত্তা ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের থেকে ছাড়পত্র পেলে ট্রেনটি কলকতার দিকে যাত্রা করবে। আমি আরো বললাম, আমরা জন্তু নই যে আমাদেরকে খাঁচায় ঢুকতে হবে। তিনি আমাকে বললেন কোনো খাঁচা তৈরি করা হয়নি। আমি বর্ডারে গিয়ে স্বচক্ষে দেখতে চাইলাম এবং তিনি রাজি হলেন। বাংলাদেশ থেকে আসা ট্রেনটি সেখানে প্রথমে রাখা হবে, তার চতুর পাশে কাঁটা তার দ্বারা ঘেরা ছিল, তবে উপরে ফাঁকা ছিল না। জনাব মুখার্জির প্রশ্ন শেষ হলে আমি আবারো ভারতের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবিলম্বে চাল রপ্তানি করার জন্য অনুরোধ জানাই। তিনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন তা রাখবেন এবং রক্ষাও করেছেন। বইয়ের একই প্যারায় তিনি আরো একটি কথা লিখেছেন যা সত্যিই আমাকে বিব্রত করেছে। তিনি লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমার ক্যান্সার চিকিৎসায় সহায়তা করেছেন- যা সত্য নয়। সম্ভবত ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে ইন্ডিয়ান কন্সাল জেনারেল অফিস থেকে একজন প্রতিনিধি প্রণব মুখার্জির শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে আমার সাথে দেখা করেন এবং বলেন, জনাব মুখার্জি বলেছেন, আমার চিকিৎসা ভারতে করতে, ইচ্ছুক হলে সব ব্যবস্থা তিনি কওে দেবেন। ক্যান্সার চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে ভালো। আমি কেন ভারতে গিয়ে চিকিৎসা কেন? তা ছাড়া আমার চিকিৎসা ২০১১ সালের মে মাসে শুরু হয় এবং কিমো থ্যারাপিসহ কোনম্যারু ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়। আমি সবিনয় উনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। আপনি এত দিন পরে কেন প্রতিবাদ করছেনÑ এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমত আমি জানতাম না প্রণব মুখার্জি বই বের করেছেন। আমার এক আত্মীয় অনেক দিন পর আমাকে বইটি পাঠিয়েছেন। অবশেষে আমি বইটি পেয়েছি। বই পেয়ে বিষয়গুলো দেখতে পেয়েছি। দ্বিতীয়ত, আমার অসুস্থতাও একটি বিষয়। তৃতীয়ত : সাম্প্রতিক এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং আমার নীরবতা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে। তিনি বলেন, সবশেষে আমি দৃঢ় এবং পরিষ্কারভাবে বলতে চাইÑ প্রণব মুখার্জির সাথে আমার চাকরির নিশ্চয়তা নিয়ে কোনো কথোপকথন হয়নি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন