ব্রিটেন : বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ১০৬ বছরে প্রথম ধর্মঘট নার্সদের

  জিবিনিউজ24ডেস্ক//  

নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতি ও তার ফলে নানা ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ যুক্তরাজ্যের নার্সরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটে গেছেন। গত ১০৬ বছরে এই প্রথম নার্সদের ধর্মঘট দেখছে ব্রিটেনবাসী।

মঙ্গলবার ব্রিটেনের নার্সদের ট্রেড ইউনিয়ন রয়েল কলেজ অব নার্সিংয়ের (আরসিএন) ডাকা এই ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালের ১ লাখেরও বেশি নার্স।

মঙ্গলবার আরসিএন থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দাবি আদায়ের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে রয়েল কলেজ অব নার্সিংয়ের ডাকে নার্সদের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সব হাসপাতালের কেমোথেরাপি, ডায়ালাইসিস, আইসিইউ, নবজাতক ও শিশুবিভাগ ব্যতীত অন্য সব ওয়ার্ডের নার্সরা এই ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন।’

নার্সরা ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেমসহ (এনএইচএস) বিভিন্ন হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর সামনে ‘পিকেট লাইন’ বসিয়েছেন বলেও বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এএফপি।

বিশ্বজুড়ে জ্বালানি পণ্যের যে উচ্চমূল্যের জেরে দেশে দেশে শুরু হয়েছে মূল্যস্ফীতি। তবে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ গুরুতর। গত অক্টোবরে ব্রিটেনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ১ শতাংশে, যা দেশটির গত ৪১ বছরের মূল্যস্ফীতির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে পৌঁছেছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশে।

ব্যাপক এই মূল্যস্ফীতির প্রভাবে খাদ্য, আবাসন, জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দিন দিন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠী বেতনভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন সম্প্রতি।

ব্রিটেনের নার্সরা অবশ্য করোনা মহামারির সময় থেকেই সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। অসন্তোষের মূল কারণ— মহামারির প্রায় দু’ বছর জুড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়াতে ব্রিটেনের সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীদের একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন ২০২০ ও ২০২১ সালে আরও ডাক্তার-নার্স নিয়োগ দিতে এনএইচএস বরাবর কয়েকবার দেন-দরবার করেছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

সম্প্রতি এনএইচএস নার্সদের বেতনবৃদ্ধির সুপারিশ জানিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেই সুপারিশ আমলে নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে নার্সদের বাৎসরিক বেতন ১,৪০০ পাউন্ড, অর্থাৎ ১ লাখ ৮০ হাজার ৩২০ টাকা বৃদ্ধিও করেছে। শতকরা হিসেবে এই ‍বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ।

কিন্তু যুক্তরাজ্যের বর্তমান মূল্যস্ফীতির বাজারের সঙ্গে বেতনবৃদ্ধির এই হার একেবারেই সংগতিপূর্ণ নয় উল্লেখ করে আরসিএন নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন চাইছেন তারা। তাদের দাবি— বেতনবৃদ্ধির হার অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করা হোক।

আরসিএনের নেতৃস্থানীয় সদস্য এবং লন্ডনের একটি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স আমিরা জানান, যুক্তরাজ্যের নার্সদের বৃহত্তম ট্রেড ইউনিরয়ন রয়েল কলেজ অব নার্সিং প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১৬ সালে। প্রতিষ্ঠার ১০৬ বছর পর এই প্রথম ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি পালন করছে এই ট্রেড ইউনিয়ন।

এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমরা নিতান্ত বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছি এবং এই ধর্মঘটকে একেবারেই হালকাভাবে বিবেচনা করছি না।’

‘পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমরা এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনবেলা পেটভরে খেতেও পারছি না। আমরা সবাই ক্লান্ত, হতাশ। সরকার বেতন যে পরিমাণ বাড়িয়েছে, তা দিয়ে এই বাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয়।’

তবে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্টিভ বার্কলে জানিয়েছেন, নার্সদের ধর্মঘট ‘গভীরভাবে দুঃখজনক’ হলেও আপাতত তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো সম্ভব নয়।

‘এটা (ধর্মঘট) খুবই দুঃখজনক। আমদের সাধ্যে যতখানি ছিল, (নার্সদের বেতন-ভাতা বাড়াতে) আমরা করেছি। এই মুহূর্তে যদি তাদের বেতন-ভাতা আরও বাড়াতে হয়, সেক্ষেত্রে সরকারের অন্যান্য খাতের কর্মীদের বেতন কাটছাঁট করতে হবে আমাদের।’

‘আপাতত আমাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই,’ এএফপিকে বলেন বার্কলে।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন