ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা ||
বালুচরের বথুয়া শাক শিশুদের জীবিকা
দুর্গম চরাঞ্চলের সাগর, নাহিদ ও রাসেল। এদের সঙ্গে যুক্ত আরও কয়েক শিশু। সবাই ছিন্নমূল পরিবারের ছেলে। প্রত্যেক দিন ছুটতে হয় ধুধু বালুচরে। এ চরে নানা ফসল ক্ষেতে গজিয়ে ওঠেছে বথুয়া শাক। সারাদিন এই শাক সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে ওরা। বিক্রিত টাকা তুলে দেওয়া হয় বাবা-মায়ের হাতে। এভাবে সংসারের যোগান দিয়ে চলেছে এই শিশুরা।
ওই শিশুদের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর এলাকায়। নদীবেষ্টিত এই এলাকার বালুচরে রবি মৌসুমে কৃষকরা ফলায় নানা ফসল। এসব ক্ষেতে আগাছা হিসেবে আপনা-আপনি গজিয়ে ওঠে বথুয়া শাক। ভেষজ গুণাগুণ এ শাকগুলোর নদী ওপারের মানুষদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই ভোক্তাদের চাহিদা পূরণসহ পরিবারের আর্থিক যোগাতে চরাঞ্চলের একঝাঁক দুস্থ শিশু ঘুরছে নিভৃত বালুচরে। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দিনব্যাপী কৃষকের মাঠে সংগ্রহ করছে বথুয়া শাক। বিকেলে হলেই সংগৃহিত শাকগুলো আঁটি বেঁধে বিক্রি করা হচ্ছে হাটে-বাজারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আট বছর বয়সের সাগর মিয়া। অভাব-অনটনে ভালো চিকিৎসা করতে না পারায় ২ মাস আগে মারা গেছে বাবা আব্দুল খালেক। মা শন্তুভান বেওয়া ছোট্র ৪ সন্তানের খাবার জোগাতে তিস্তার চরাঞ্চলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। মজুরি পায় মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এ দিয়ে তেমন সংসার চলে না। এরই মাঝে চিন্তায় পড়ে যায় ছোট্ট শিশু সাগর মিয়া। এ ভাবনা থেকে অন্যের ফসল ক্ষেতে গজিয়ে ওঠা বথুয়া শাক সংগ্রহ করা শুরু করে। প্রত্যেকদিন শাকগুলো বিক্রি করে মায়ের হাতে তুলে দেয় টাকা। এই শাক তোলা দেখে সাগরের সঙ্গে শাক সংগ্রহে যোগ দেয় প্রতিবেশেী উকিল মিয়া, রায়হান বাবু, নাহিদ মিয়া, আরিফুল ইসলাম ও রাসেল মিয়া। সবাই প্রায় সাগরের সম বয়সী। ওরা দুর্গম চরে বথুয়া শাক তুলে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে তিস্তার ওপারে সুন্দরগঞ্জের মীরগঞ্জ বাজারে বিক্রি করে। ৫টি শাকের আঁটির দাম ১০ টাকা মাত্র। কমদামে সতেজ বথুয়া পাওয়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে ভোক্তারা। এভাবে প্রত্যেকদিন ৭০ থেকে ৮০ টাকার শাক বিক্রি করে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয় সাগর মিয়ারা।
লেখাপাড়া আর শৈশবের দূরন্তপনা ছেড়ে শিশু শ্রম দেওয়া ওই সাগর মিয়াসহ অন্যান্য শিশুরা জানায়, সবাই গরিব পরিবারের সন্তান। বাবা কিংবা মায়ের শ্রমের মূল্য দিয়ে সংসার চলে না। তাই চরের বথুয়া শাক বিক্রি করে কিছুটা হলেও বাবা-মাকে সহযোগিতা করছে।
সাগারে মা শন্তুভান বেওয়ার বলেন, আমার অভাব-অনটনের সংসার। ৪ সন্তান রেখে দুই মাস আগে স্বামী মারা গেছে। এখন সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। বাধ্য হয়ে নিজে কৃষি শ্রমিকের কাজ করছি। পাশাপাশি সাগর মিয়া বথুয়া শাক সংগ্রহ করে তা বিক্রি করছে। এ দিয়ে আপতত কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করা হচ্ছে।
চরাঞ্চলের কৃষক মজিবর রহমান জানান, চলতি রবি মৌসুমে বালুচরে ভুট্রা-মরিচ ও গম আবাদ করেছেন। এসব ক্ষেতে আপন খেয়ালে গজিয়ে ওঠেছে বথুয়া শাক। এই শাকগুলো দরিদ্র ঘরের শিশুরা তুলে নিয়ে বিক্রি করছে। এতে করে আগাছাও পরিস্কার হচ্ছে তার।
সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লেবু জানান, এখানকার চরাঞ্চলের মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস। সেখানে সরকারি সেবা পৌঁছানো অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে ওইসব শিশুর পরিবারে আরও সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন